আগে ছিলেন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এখন রাতারাড়ি বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন। রাজধানীর দক্ষিণ খিলগাঁও পুবালী মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির এই তিন নেতা। তারা হলেন, সমিতিরি সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়া, সেক্রেটারি খলিলুর রহমান মুন্সি ও পরিচালক আতাউর রহমান। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস অবৈধভাবে নির্মিত আখ্যাদিয়ে এই মার্কেটটি ভেঙ্গে ফেলেন।
এদিকে ছাত্র জণতার গণআন্দোলেনে গতবছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার এবং মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের বিদায় হয়েছে। এরপরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে জোরপূর্বক সাবেক আওয়ামী লীগ বর্তমানে নব্য বিএনপির ব্যবসায়ী নেতা পরিচয়ে জোরপূর্বক উক্ত স্থানে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। পুৃরোদমে মার্কেটের বাইরে চলাচলের রাস্তা সরকারি খাস জায়গা দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে, নব্য বিএনপি পরিচয়দানকারী এই চক্রটির সাথে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার যোগশাজস রয়েছে। তা নাহলে প্রকাশ্যে কি ভাবে এই মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে।
শুধু খাস জায়গাই নয় পাশের রেলের জায়গাও তারা ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করছেন। ফলে একদিকে যেমন সরকারি জায়গা বেহাত হচ্ছে অন্যদিকে মার্কেটের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে এবং ক্রেতা বিক্রেতার চলাচলের রাস্তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, অভিযুক্ত তিন ব্যক্তি সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করছে। এখান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দুর্নীতি করার সুযোগ নিয়েছে তারা। তারা মার্কেটের স্বার্থ না দেখে নিজেদের পকেটে টাকা ঢুকানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, আতাউর, খলিলুর রহমান ও আব্দুল কুদ্দুস মিয়া মিলে এই অবৈধ মার্কেট নির্মাণ করছেন। তাদের না আছে জায়গার দলিল, না আছে রাজউকের অনুমতি, না আছে সমিতির অনুমতি, আর না আছে ফায়ার সার্ভিসের অনুমতি। সবকিছুই করছে গায়ের জোরে। জবর দখল করে মার্কেট নির্মাণ করছেন তারা।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মুল মার্কেটটি ৩০ দশমিক ২২ শতাংশ জমিতে নির্মিত হয়েছে। এই দলিলের খতিয়ানে ৩৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। তবে আর এস এ এসে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ জমি সরকারি খাস খতিয়ানে চলে যায়। পাশেই রেলের জায়গা রয়েছে। এখন ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং রেলের কিছু জমি দখল করে নতুন করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন করে এই মার্কেট নির্মাণে সমিতির কোনো লাভ নেই বরং ক্ষতি হবে। এরপরেও তারা মার্কেট নির্মাণ করছে।
অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, নতুন করে নীচে মোট ২৪টি দোকান নির্মিত হবে। বিক্রির জন্য একেকটি দোকান বাবদ ৩০ লাখ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এতে মোট ৭ কোটি ২০ লাখ টাকা তারা পকেটে নিতে পারবে। অন্যদিকে যারা দোকান ক্রয় করলেন তারা ভবিষ্যতে ঝামেলায় পড়ার সম্ভবনাই রয়ে গেলো। কারন এক সময় সরকারি খাস জমি উদ্ধার ও রেলের জায়গা উদ্ধার করলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ওই মার্কেটের সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি, অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ বন্ধ হোক। যে মার্কেট আছে তার জন্য সামনে খোলামেলা জায়গা থাকা জরুরী। এটি ক্রেতা সাধারণের বের হওয়ার জায়গা। এটি বন্ধ হলে শুধু একমুখী রাস্তা খোলা থাকবে। মার্কেটে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই বিপদে পড়তে হবে।
এ বিষয়ে সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সব নিয়ম কানুন মেনেই আমরা বাড়তিভাবে মার্কেট নির্মাণ করছি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বুঝি না। যখন যে দল থাকে তখন সবার সাথেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। কারণ আমরা ব্যবসায়ী। সেক্রেটারি খলিলুর রহমানকে ফোনে পাওয়া যায়নি। আর আতাউর রহমান বলেন, মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি সকলেই অবগত রয়েছেন। এসিল্যান্ড মহোদয় এসে দেখে গেছেন। আমরা নিয়ম মেনেই সব করছি। খাস জায়গা দখলে নিলে সরকার আসুক, অভিযোগ করে জায়গা ফেরত নেবে। এতে অন্য কারও সমস্যা তো হওয়ার কথা না।
এ বিষয়ে জানতে রমনা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি ল্যান্ড, রমনা) আব্দুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের (দক্ষিণ) উপ প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শাজাহান আলী, কর কর্মকর্তা বাজার শাখার আতাহার আলী খানের সাথে এই বিষয়ে কথা হয়। তারা এই বিষয়ে কিছুই জানেনা বলে জবাব দেন।
আ. দৈ./কাশেম/ ইমু