ঋতু বৈচিত্রের ধরণ অনুযায়ি প্রািত বছর মধ্য অক্টোবরের মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়। সেই সাথে শেষ হয় বর্ষকালে দেশে বৃষ্টির ধারা। জুন মাসে মৌসুমি বায়ু দেশের অভ্যন্তওে প্রবেশ করে। এরপর টানা চারেমান বৃষ্টি শেষে অক্টোবওে বিদায় নেয়ূ। প্রর্কতির এই ধর অনুযায়ি ১৫ অক্টোবরের মধ্যৌ বর্ষার বিদায় নেয়া কথা।
ািকন্তু আকাশের মেঘ বলছে অন্য কথা। এই শরতে এসে একটানা বৃষ্টি ঝড়ছে। আষঢ়ের মতো বৃষ্টিপাত লেগেই আছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে বৃষ্টির এই ধারা আ্গামী নবেম্বরে এমনকি ডিসেম্বরের থাকবে। এ কারণেই প্রাশ্ন দেখা দিয়েছে প্রকৃতির বর্ষকাল কি পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলঝে গত এক ধশকের আবাহাওয়্ াধরণ বদলে গেছে। ফলে আষাঢ় শ্রাবন মাসে বৃষ্টি নেই। ভাদ্র আশ্বিনে ঝড়ছে অঝোর ধারা।
বাংলাদেশে এখন শরৎকাল। বৃষ্টির প্রবণতা কমে নীল আকাশে ভেসে বেড়ানোর কথা সাদা-কালো মেঘের ভেলা। কিন্তু সারাদেশেই কম বেশি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে কয়েকদিন ধরে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে এবং আসছে শীতেও এর প্রভাব পড়তে পারে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম নয় দিনে শুধু ঢাকাতেই বৃষ্টি হয়েছে ১৫২ মিলিমিটার, আর সারা দেশে মোট বৃষ্টি হয়েছে ৫ হাজার ৭৩৯ মিলিমিটার। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঢাকায় কিংবা দেশে এই অক্টোবরের বৃষ্টির মূল কারণ হলো মাসের শুরুতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপ।
কিন্তু নিম্নচাপ বা এর প্রভাব শেষ হওয়ার পরেও বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই কেন এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, গত পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে অক্টোবরের এই বৃষ্টিকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। হবাংলাদেশের বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে আষাঢ়-শ্রাবণ, অর্থাৎ মধ্য জুন থেকে মধ্য অগাস্ট পর্যন্ত বর্ষাকাল। যদিও বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, মূলত বর্ষাকাল শুরু হয় জুন মাসে এবং অক্টোবর পর্যন্ত বর্ষার প্রভাব থাকে। তবে আবহাওয়া বিভাগের তথ্যমতে, গত মাসের শেষ থেকেই ধারাবাহিকভাবে বৃষ্টি হচ্ছে মূলত বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর বৃষ্টিপাতের মাত্রা একটু বেশি বলে অনেকে মনে করছেন।
সাধারণভাবে বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে বেশি বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর সেভাবে বৃষ্টিপাত হয়নি। চলতি মাসের প্রথম দিনে ঢাকায় যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, সেটা এবছর ২৪ ঘণ্টায় হওয়া সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। সেদিন চব্বিশ ঘণ্টায় প্রায় ২০৬ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোয় অক্টোবর মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়েছে।
২০২০ সালের অক্টোবরে আবহাওয়া বিভাগের ঢাকা স্টেশন ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছিলো। ওই বছরের ওই সময়টায় ঢাকা বিভাগে ৯২১ ও সারা দেশে ৯ হাজার ৭৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের অক্টোবরে ঢাকা শহরে ১৬৬ মিলিমিটার, ঢাকা বিভাগে মোট ৮৬৯ মিলিমিটার এবং সারা দেশে ৮ হাজার ৬৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিলো। এরপর ২০২২ সালের একই সময়ে ঢাকা শহরে ২৯৭ মিলিমিটার, ঢাকা বিভাগে মোট ১ হাজার ৮৭২ এবং সারাদেশে ৯ হাজার ৭৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিলো। ২০২৩ সালে ঢাকায় ৩২৬ মিলিমিটার, ঢাকা বিভাগে ২ হাজার ১৯৬ মিলিমিটার এবং সারাদেশে ১১ হাজার ২৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিলো। এরপর ২০২৪ সালে ঢাকায় ২৫৮ মিলিমিটার, ঢাকা বিভাগে ২ হাজার ৬২৬ মিলিমিটার এবং সারাদেশে ১৯ হাজার ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিলো। আর চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম নয় দিনে ঢাকা শহরে বৃষ্টি হয়েছে ১৫২ মিলিমিটার।
“এই পাঁচ বছরের তথ্য উপাত্ত দেখলে চলতি বছরের অক্টোবরের বৃষ্টিকেই অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তাতে অস্বাভাবিকতা নেই। বরং এবার নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও কিছুটা বৃষ্টিপাত হতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম। সিনিয়র আবহাওয়াবিদদের একজন বজলুর রশীদও বলছেন, অক্টোবর মাসের এ সময়টায় প্রতি বছর কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়ে আসছে। “অক্টোবরের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে মৌসুমি বায়ু বিদায় নেয়। ফলে এ সময়টায় বৃষ্টিপাত হয়। মনে রাখতে হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরেও কিন্তু ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছিলো,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. রশীদ।
চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে। তবে সামনের কয়েকদিনের মধ্যে আকাশ আবার রৌদ্রোজ্জ্বল হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণের আদ্রতা আর পশ্চিমের (ভারতের দিক থেকে আসা) গরম বাতাসের সংমিশ্রণে গত কিছুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদরা। এই অবস্থা পাল্টাতে পারে জানিয়ে বজলুর রশীদ বলছেন, “অক্টোবরের মাঝামাঝিতে পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। কারণ বাতাস তখন উত্তরে শুষ্ক অঞ্চল থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হবে। এর প্রভাবে আর্দ্রতা কিছু কমবে, যার ফলে বৃষ্টিপাতও কমে আসবে।” তবে সমুদ্রে লা নিনার (যখন পূর্ব-পশ্চিম বাতাস আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং যা উষ্ণ জলরাশিকে আরও পশ্চিমে ঠেলে দেয়) প্রভাবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন। তার মতে, ডিসেম্বরে বৃষ্টির পূর্বাভাস ঠিক থাকলে এবারের শীতকালটাও অন্য রকম হতে পারে, অর্থাৎ শীত আসতে বিলম্ব হতে পারে কিংবা শীতের সময়কালটাও কম হতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, মৌসুমি বায়ুর বর্ধিতাংশ বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ফলে এই মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। শনিবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণেরও খবর পাওয়া গেছে। নেত্রকোনায় ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এছাড়া রাঙ্গামাটিতে ৫৩, ফেনীতে ২৫, মোংলায় ২৪, ভোলায় ২২, গোপালগঞ্জে ২৮ ও সিলেটে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশের প্রায় সব বিভাগেই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ১২ই অক্টোবর খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু এক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য জায়গায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। সোমবার চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবারও একই ধরনের পরিস্থিতি থাকার সম্ভাবনার কথা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। আগামী ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত একই পরিস্থিতি থাকার পর দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।