বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন জুলুম,হত্যা ও গুমের মতো জগন্যতম ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক গণহত্যাসহ বিভিন্ন নৃশংস ও মানবতা বিরোধী অপরাধের সুনিদিষ্ট অভিযোগ রয়েছে,ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিকদের বিরুদ্ধে। টানা ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এবং তার সন্ত্রাসী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার এখন জাতীয় দাবিতে পরিনত হয়েছে।
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি) ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচারের পাশাপাশি সন্ত্রাসী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে শিগগিরই এনসিপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের বিচারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে।
আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) এনসিপির পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বা প্রসিকিউশনের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিচার জন্য সুনিদিষ্ট অভিযোগ জমা দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ বিষয়ে এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতা প্রসিকিউশনের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। এসময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে মামলা করার ক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে এনসিপির নেতা জানতে চান।
জবাবে তাকে জানানো হয়, সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে অন্য একটি দলের করা অভিযোগের তদন্ত করতে এরই মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে এবং তিনি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছেন। এনসিপির পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে সে বিষয়েও ওই অভিযোগের সঙ্গে তদন্ত হতে পারে। এতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগটি আরও জোরালো হবে।
প্রসিকিউশনের ওই সদস্য আরও জানান, আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে এনসিপি অভিযোগ দিলে প্রসিকিউশন দলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে সংক্ষুব্ধ যে কেউ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিতে পারবেন। এমনকি শহীদ পরিবার থেকেও অভিযোগ করা যাবে।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর সকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সংগঠন হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করতে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
তাজুল বলেন, ‘এনডিএম নামের একটি দল আগেই অভিযোগ দিয়েছিল। আমরা সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করছি। সুতরাং বলা যেতে পারে, এই মুহূর্তে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপরাধী সংগঠন হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রাথমিক তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছি। সেটা পুরোদমে শুরু হলে আমরা বলতে পারব, বিষয়টি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে।’
গত বছরের ২ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ জমা দেন। সেখানে গণঅভ্যুত্থান দমনে সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে বিচার চাওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দল- সাম্যবাদী দল, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ, ইনু), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি (মেনন), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণআজাদী লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাসদ ও জাতীয় পার্টির (জেপি) বিরুদ্ধে দল হিসেবে গণহত্যার অভিযোগ গঠন করে তদন্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি জানিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও। গত ২১ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের জানান, নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কেননা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলগতভাবে আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কারণ, অস্থায়ী সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগকে ঠেকানো যাবে না। এছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানাব। আদালতের কাছে এখন যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ এসেছে। কারণ রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে দলীয় প্রধান হিসেবে জনগণকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন হাসিনা। তাই জনগণই প্রতিরোধ করে তাকে উৎখাত করেছে। ফলে রাজনৈতিকভাবে এটা আওয়ামী লীগের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ। এজন্য দল হিসেবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত।’
এদিকে গত ৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ যে ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, আমরা মনে করি দল হিসেবে তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন।
তবে আওয়ামী লীগের সময়ের সুবিধাভোগীরা নানাভাবে দলটিকে ফের চালু পুনর্বাসন করার অপচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু দেড় সহস্রাধিক মৃত্যু ও প্রায় ৩০ হাজার মানুষের আহত হওয়ার পর কোনোভাবেই দায়ী দলকে আবার পুনর্বাসন করতে দেবে না বাংলাদেশের জনগণ। সেই লড়াই যদি আবার করতে হয় আমাদের, আমরা আবার সেটার জন্য প্রস্তুত।’
আ. দৈ./কাশেম