নিম্নমানের কসমেটিবস দ্রব্যে বাজার এখন সয়লাভ। প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এসব কজসমেটিক দ্রব্য। সংশ্লিষ্ট দেশে বিদেশি নামিদাবি ব্রান্ডের নামে বিভিন্ন মার্কেট বিপনী বিতান শািপল মলেও অবাধে বিক্রি হচ্ছে।
বিএসটিআইয়ের ােকান অনুদেন নেই। এস ব নিম্নমানের কসমেটিকস দ্রব্য ব্যবহারে স্কিন ক্যান্সারের ঝুকি বহুগুনে বেড়েছে। ল্যাবে পরীক্ষায় আড়াই হাজার গুণেরও বেশি ক্ষতিকর হাইড্রোকুইনোন পাওয়া যায়। যা স্কিন ক্যান্সারসহ লিভার এবং কিডনির জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর।
সম্প্রতি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) পুরান ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান অবৈধ ও নিম্মমানের বিভিন্ন ব্রান্ডের কসমেটিকস জব্দ করা হয়। জব্দকৃত কসমেটিকস বিএসটিআই ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পারীক্ষায় ক্ষতিকারক হাইড্রোকুইনোন উপস্থিতি মিলেছে আড়াই হাজারগুন বলে জানিয়েছেন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এসএম ফেরদৌস আলম।
বাহারী সজ্জায় বিদেশী লেভেল আর নামী-দামি ব্র্যান্ডের আকর্ষনীয় মোড়কে থরে থরে সাজানো রাজধানী সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কসমেটিকসের দোকানগুলো। তবে খালি চোখে দেখে বুঝার উপায় নাই কোনটি আসল আর কোনটি নকল। পুরান ঢাকার চকবাজার, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব নকল কসমেটিকস তৈরির কারখানা রয়েছে। আর একটি অসাধু চক্র দেশি-বিদেশী বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের পরিত্যক্ত কৌটাতে নকল প্রসাধনী ঢুকিয়ে কম দামে বাজারজাত করছে। কম দামে পাওয়াতে ব্র্যান্ডের কসমেটিকস মনে করে ভোক্তারাও তা দেদারসে ক্রয় করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন নকল ভেজাল প্রসাধনীতে মাত্রাতিরিক্ত মার্কারী, সীসা, স্টেরয়েড ও হাইড্রোকুইনোন সহ নানান ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকায় তা ব্যবহারে অনেকের মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত প্যারাবেনস যুক্ত প্রসাধনীর দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়, ফলে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। ফর্সা হতে গিয়ে আবার কারও মুখের চামড়া সাদা হয়ে যাচ্ছে অথবা স্থায়ী কালো দাগ পড়ে যাচ্ছে। গর্ভবতী নারীরা এইসব প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। নকল কসমেটিকস দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে স্কিন ক্যান্সার সহ লিভার ও কিডনির জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, বাংলাদেশে কসমেটিকস খাতের বাজার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার। তারমধ্যে কালার কসমেটিকসের চাহিদা ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং স্কিন কেয়ার পণ্যের চাহিদা প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায় যে, মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনী পণ্য বৈধভাবে আমদানি হয়ে থাকে বাকি ২৪ হাজার কোটি টাকার কসমেটিকস পণ্য লাগেজ পার্টির মাধ্যমে চোরাই পথে দেশে প্রবেশ করে। সেই হিসাবে ৭০ শতাংশ কসমেটিকস পণ্যের বাজার কালোবাজারীদের দখলে। এভাবে নকল কসমেটিকস তৈরি এবং শুল্ক ফাঁকির মাধ্যমে আমদানির ফলে ক্রেতারা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি সরকারও হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
বিএনটিআই জানায় জব্দকৃত মালামাল এর নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, বিএসটিআই নির্ধারিত মান অনুযায়ী হাইড্রোকুইনোন এর মাত্রা থাকতে হবে সর্বোচ্চ ৫ মি.গ্রাম/কেজি কিন্তু রিপোর্টে আড়াই হাজার গুণেরও বেশি হাইড্রোকুইনিন পাওয়া যায়। ল্যাবে পরীক্ষাকৃত এনসাইন ব্রান্ডের স্ক্রিন ক্রিমে ১৩৯৬৮.৩ মি.গ্রাম/কেজি যা বিএসটিআই নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড এর তুলনায় ২৭৯৩ গুণ বেশি। এছাড়া স্কিনলাইট ব্রান্ডের স্ক্রিন ক্রীমে ১২১৭৫.৭০ মি.গ্রাম/কেজি, স্কিনসাইন ব্রান্ডের স্কিন ক্রিমে ১২৩২৫.৩৯ মি.গ্রাম/কেজি, নো স্কেয়ার্স ব্রান্ডের স্কিন ক্রিমে ১২৪৫২.৯৫ মি.গ্রাম/কেজি, মাইফেয়ার ব্রান্ডের স্কিন ক্রিমে ১১৮৭১.১৪ মি.গ্রাম/কেজি, ইলোসন-এইচটি ব্রান্ডের স্ক্রিন ক্রিমে ১২১০৮.৬১ মি.গ্রাম/কেজি, মিরাকল ব্রান্ডের স্কিন ক্রিমে ১১৯১৬.১৯ মি.গ্রাম/কেজি, স্কিন সাইন ব্রান্ডের স্কিন ক্রিমে ১১৩৫৪.২৬ মি.গ্রাম/কেজি, স্কিন সানরাইজ ব্রান্ডের স্কিন ক্রিমে ১১৮৪৩.৫৯ মি.গ্রাম/কেজি হাইড্রোকুইনোন পাওয়া যায়।
প্রতিষ্ঠানটি জানায় রাজধানীর চকবাজার এলাকায় মেসার্স সেঞ্চুরী ট্রেড ও মেসার্স স্বর্ণা ইন্টারন্যাশনালকে বিএসটিআই’র লাইসেন্স ও ছাড়পত্র গ্রহণ ব্যতীত এবং মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বিভিন্ন ব্রান্ডের স্কিন ক্রিম, বেবি অয়েল, লিপস্টিক, স্কিন পাউডার, হোয়াইটেনিং ক্রিম পণ্য বাজারজাত করতে দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, সাবেক উপ-পরিচালক ও আইন কর্মকর্তা, ড. এম. এন. আলম এ বিষয়ে বলেন, কসমেটিকস জনস্বাস্থ্যের সাথে সরাসরি জড়িত বিধায় সিএসটিআই ও ডিজিডিএ এর মধ্যে রশি টানাটানি বন্ধ করে তাদের মধ্যকার আইনগত বিরোধ ও বিদ্যমান সমস্যা সমূহ নিরসন করে উন্নত বিশ্বের আদলে একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। সেজন্য বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধান সংশোধন করে প্রয়োজনে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে সমস্যা দ্রুত সমাধান হতে পারে। যথাযথ পরিকল্পনা এবং পলিসি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য রপ্তানী খাতের ন্যায় কসমেটিকস শিল্পও বিশ্ববাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় রপ্তানীখাত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।