বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫,
২৯ কার্তিক ১৪৩২
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
স্বাস্থ্য
অপারেশন ছাড়াই গলবে পিত্তথলির পাথর!
স্বাস্থ্য রিপোর্ট
Publish: Tuesday, 30 September, 2025, 1:15 PM  (ভিজিট : 65)

আজকের ব্যস্ত জীবনে খাবারের অনিয়ম, কম পানি পান, তেল—চর্বিযুক্ত খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভাবে মানুষের মধ্যে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে পিত্তথলিতে পাথর জমা হওয়া বা গলস্টোন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় এই রোগকে জটিল এবং কেবলমাত্র অস্ত্রোপচারের মাধ্যমেই সমাধানযোগ্য বলে মনে করা হতো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও বিকল্প পদ্ধতির সমন্বয়ে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এবং ছোট আকারের পাথর অনেক সময় ঘরোয়া নিয়ম মেনে চললে গলতে পারে।

এটি নিঃসন্দেহে একটি আশার খবর। কারণ অস্ত্রোপচার মানেই খরচ, শারীরিক কষ্ট এবং মানসিক চাপ। তাই প্রাথমিক অবস্থায় সঠিক সচেতনতা এবং জীবনধারায় পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকাংশে এ রোগকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

পিত্তথলিতে পাথর কীভাবে তৈরি হয়?
পিত্তথলি হলো লিভারের নিচে অবস্থিত একটি ছোট অঙ্গ। এর কাজ হলো লিভারে উৎপাদিত পিত্ত (ইরষব) জমা রাখা এবং প্রয়োজনে তা ক্ষুদ্রান্ত্রে পৌঁছে দেওয়া। পিত্ত হজম প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, বিশেষত চর্বি ভাঙতে। কিন্তু যখন পিত্তে কোলেস্টেরল বা বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যায় অথবা পিত্তথলির খালি হওয়ার ক্ষমতা কমে যায়, তখন পিত্ত ঘন হয়ে জমাট বাঁধে এবং পাথর তৈরি হয়। পাথরের আকার কখনো বালির দানার মতো ছোট, আবার কখনো মার্বেলের মতো বড়ও হতে পারে।

গলস্টোনের সাধারণ উপসর্গ
প্রাথমিক পর্যায়ে অনেকের কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তবে পাথর বড় হলে বা নড়াচড়া করলে দেখা দেয় নানা সমস্যা, যেমন: হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা (বিশেষত ডান দিকের উপরের পেট বা পাঁজরের নিচে)
বমি বমি ভাব বা বমি, হজমে সমস্যা, গ্যাস ও অস্বস্তি, জ্বর ও ঘাম (সংক্রমণ হলে), চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া (পাথর পিত্তনালী আটকে দিলে)।

এই উপসর্গগুলো অবহেলা করলে সমস্যা জটিল হয়ে যেতে পারে এবং তখন অস্ত্রোপচার ছাড়া উপায় থাকে না।
চিকিৎসকের দৃষ্টিতে অপারেশন বনাম ঘরোয়া সমাধান-----

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় বা পুনরাবৃত্ত পাথরের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারই নিরাপদ সমাধান। তবে ছোট আকারের এবং প্রাথমিক পর্যায়ের পাথর অনেক সময় জীবনধারার পরিবর্তন ও ঘরোয়া কিছু অভ্যাসে ধীরে ধীরে গলে যেতে পারে।
ডা. মাহমুদা হক, লিভার ও গলব্লাডার বিশেষজ্ঞ, বলেন— “সব ধরনের গলস্টোন অপারেশন ছাড়াই গলানো সম্ভব নয়। তবে রোগী যদি সময়মতো ধরা পড়ে এবং ছোট পাথর থাকে, তাহলে স্বাস্থ্যকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও কিছু প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।”

অপারেশন ছাড়াই পাথর গলানোর ঘরোয়া উপায়— 
১. প্রচুর পানি পান
শরীরে পানির ঘাটতি হলে পিত্ত ঘন হয়ে যায়, ফলে পাথর বড় হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। প্রতিদিন ২—৩ লিটার পানি পান করলে পিত্ত পাতলা থাকে এবং ছোট পাথর ধীরে ধীরে গলে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
টিপস: চাইলে পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে বাড়তি উপকার পাওয়া যায়।
২. সাইট্রাস ফলের জাদু
লেবু, কমলা, মাল্টার মতো ফল ভিটামিন সি ও সাইট্রিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। এগুলো হজমশক্তি বাড়ায়, কোলেস্টেরল কমায় এবং পাথর গলতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক গ্লাস লেবুর শরবত খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
৩. ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার
গোটা শস্য (যিড়ষব মৎধরহং), শাকসবজি, ফলমূল, ডাল— এসব খাবারে ফাইবার বেশি থাকে। ফাইবার হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এবং পিত্তথলির ওপর চাপ কমায়।
৪. চর্বি ও অতিরিক্ত নুন এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত তেল—চর্বিযুক্ত খাবার, লাল মাংস, ভাজাপোড়া ও বেশি নুনযুক্ত খাবার গলব্লাডারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। চকোলেট বা চিজজাতীয় খাবারও অনেক সময় পিত্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এসব যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা গলস্টোনের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। তবে দ্রুত ওজন কমানোও ক্ষতিকর। ধীরে ধীরে ব্যায়াম ও সুষম আহারের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৬. ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার
দই, সয়াবিন, ডাল, তিল ও বাদামজাতীয় খাবারে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন থাকে, যা হজমশক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৭. হলুদের গুণ
হলুদে থাকা কুরকুমিন উপাদান প্রদাহ কমায়, হজমে সহায়তা করে এবং গলব্লাডারের ব্যথা হ্রাস করে। প্রতিদিন অল্প হলুদ মিশ্রিত দুধ পান করা যেতে পারে।
৮. বেরি ও বেরি জুস
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাসবেরি বা এজাতীয় ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এগুলো শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে নতুন পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমে।

কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলতে হবে?
অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার, লাল মাংস (বিশেষত খাসি), অতিরিক্ত নুনযুক্ত খাবার, প্রসেসড ফুড (ফাস্টফুড, প্যাকেটজাত খাবার) এবং অতিরিক্ত চকোলেট বা চিজ।
অপারেশন ছাড়া চিকিৎসা কতটা নিরাপদ?
ঘরোয়া উপায়গুলো সহায়ক (ংঁঢ়ঢ়ড়ৎঃরাব) হিসেবে কাজ করে। তবে এগুলো কখনোই চিকিৎসকের বিকল্প নয়। কারণ— বড় বা একাধিক পাথর থাকলে এগুলো গলানো কঠিন।
সংক্রমণ হলে ঘরোয়া উপায় কার্যকর নয়
দীর্ঘদিন অবহেলা করলে পাথর পিত্তনালী আটকে জটিলতা তৈরি করতে পারে তাই নিয়ম মানার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।

বিশ্বে চিকিৎসা গবেষণায় নতুন দিগন্ত
বিভিন্ন দেশে গবেষণা চলছে যাতে ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট দিয়ে গলস্টোন ভেঙে ফেলা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে উদেনোডিওল নামক ওষুধ ব্যবহারে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে ছোট কোলেস্টেরল স্টোনের ক্ষেত্রে। তবে এগুলো এখনো সীমিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং সবার জন্য কার্যকর নয়।

রোগী ও বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা
ঢাকার বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, “আমার গলব্লাডারে ছোট পাথর ধরা পড়েছিল। ডাক্তার বললেন অপারেশন তাড়াহুড়া করে করতে হবে না। আমি প্রতিদিন লেবুর পানি খাওয়া শুরু করি, তেল—চর্বি এড়িয়ে চলি। কয়েক মাস পর আবার স্ক্যান করালে পাথরের আকার ছোট হয়ে যায়।”
অন্যদিকে চিকিৎসকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন—এ অভিজ্ঞতা সবার ক্ষেত্রে একই নাও হতে পারে। তাই ঘরোয়া উপায় চেষ্টা করলেও চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণ থাকা জরুরি।

শেষ কথা
গলস্টোনের সমস্যা অবহেলা করার মতো নয়। তবে আশার কথা হলো, প্রাথমিক অবস্থায় কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ও ঘরোয়া নিয়ম মেনে চললে অনেক সময় অস্ত্রোপচার ছাড়াই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
তবু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। ঘরোয়া উপায়গুলো কেবল সহায়ক, বিকল্প নয়। তাই উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
সুস্থ জীবনধারা, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতা— এগুলোই পারে আপনাকে অস্ত্রোপচারের ভয় থেকে দূরে রাখতে।


হার্টের জটিলতা শনাক্তে যুগান্তকারী এআই—স্টেথোস্কোপ
চিকিৎসা প্রযুক্তির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে চলেছে নতুন প্রজন্মের স্টেথোস্কোপ। প্রচলিত যন্ত্রের চেহারা বদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যুক্ত হওয়ায় এবার মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই শনাক্ত হবে হৃদযন্ত্রের প্রাণঘাতী রোগ। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ ও ইম্পেরিয়াল কলেজ হেলথকেয়ার এনএইচএস ট্রাস্টের গবেষকরা একসঙ্গে এই প্রযুক্তি তৈরি করেছেন। তাদের দাবি, এই এআই—চালিত স্টেথোস্কোপ হার্ট ফেলিওর, হার্ট ভালভ ডিজিজ এবং অস্বাভাবিক হার্টবিট বা অ্যারিদমিয়া— এই তিন মারাত্মক রোগ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শনাক্ত করতে পারে।
দুই শতাব্দীর পুরনো যন্ত্রে বিপ্লব
প্রথম স্টেথোস্কোপ আবিষ্কার হয়েছিল ১৮১৬ সালে। তখন থেকেই এটি চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। প্রায় আড়াই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ডাক্তাররা রোগীর বুকের ভেতরকার শব্দ শুনে অসুখের প্রাথমিক ধারণা পেতেন। কিন্তু এতদিন ধরে এই যন্ত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে ডিজিটাল স্টেথোস্কোপ চালু হয়েছিল, যা শব্দ রেকর্ড করে বিশ্লেষণ করত। এবার সেই যন্ত্রই এআই যুক্ত হয়ে রূপ নিয়েছে এক ‘হাই—টেক’ ডিভাইসে।
ছোট একটি প্লেয়িং কার্ডের আকারের এই এআই—স্টেথোস্কোপ রোগীর বুকে রাখা হলে একসঙ্গে ইসিজি সিগন্যাল (হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক সংকেত) ও হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহের শব্দ সংগ্রহ করে। পরে সেটি ক্লাউডে পাঠানো হয় এবং অ্যালগরিদম অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে তা বিশ্লেষণ করে। এই সব সিগন্যাল এতটাই সূক্ষ্ম যে মানুষের কানে ধরা পড়ে না। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিশ্লেষিত রিপোর্ট রোগীর মোবাইল ফোনে চলে আসে।
পরীক্ষায় অভূতপূর্ব সাফল্য
যুক্তরাজ্যের প্রায় ২০০টি জিপি ক্লিনিক থেকে ১২ হাজার রোগীর ওপর এই যন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীরা মূলত শ্বাসকষ্ট বা অতিরিক্ত ক্লান্তির মতো উপসর্গে ভুগছিলেন। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে— হার্ট ফেলিওর শনাক্তের হার এআই স্টেথোস্কোপ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের তুলনায় দুই গুণ বেশি। হার্ট ভালভ ডিজিজ শনাক্তের হারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন শনাক্ত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি।
অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন হলো এক ধরনের অনিয়মিত হার্টবিট, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা পড়লে স্ট্রোক প্রতিরোধে জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
চিকিৎসকদের আশা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ রোগীর হার্ট ফেলিওর ধরা পড়ে তখনই, যখন তারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু এআই স্টেথোস্কোপ এই বাস্তবতা পাল্টে দিতে সক্ষম। দ্রুত শনাক্তকরণ মানে হলো প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা শুরু করা, যা অসংখ্য জীবন বাঁচাতে পারে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর হেলথ অ্যান্ড কেয়ার রিসার্চের উদ্ভাবন বিভাগের পরিচালক প্রফেসর মাইক লুইস এই আবিষ্কারকে ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার ভাষায়— “এটি এক সত্যিকারের গেমচেঞ্জার। এটি সরাসরি জিপিদের হাতে আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে দেবে, যাতে তারা কমিউনিটি পর্যায়েই প্রাণঘাতী হৃদরোগ শনাক্ত করতে পারেন। এভাবে মানুষকে হাসপাতালে পাঠানোর আগেই রোগ ধরা সম্ভব হবে।”
প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা
যদিও এর কার্যকারিতা প্রমাণিত, তবুও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। তাদের মতে, এআই স্টেথোস্কোপ সব ধরনের পরীক্ষা—নিরীক্ষার বিকল্প নয়। এটি মূলত উপসর্গযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত। নিয়মিত সুস্থতা পরীক্ষার জন্য এটি না ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণ নির্ভুল নয়; ভুল শনাক্তকরণের সম্ভাবনা থেকেই যায়।

রোগীদের জন্য সুবিধা
এই যন্ত্র চালু হলে রোগীরা কী ধরনের সুবিধা পাবেন?
১. দ্রুত রোগ শনাক্তকরণ— মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই রোগ নির্ণয়।
২. প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু— জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
৩. চিকিৎসা ব্যয় কমানো— হাসপাতালে দেরিতে ভর্তি হওয়ার কারণে যে বিপুল খরচ হয়, তা কমে যাবে।
৪. গ্রামীণ পর্যায়ে সুবিধা— বড় হাসপাতালে না গিয়েও স্থানীয় ক্লিনিকে এই পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সম্ভাব্য প্রভাব
বিশ্বে হৃদরোগে মৃত্যুর হার প্রতি বছর বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ হৃদরোগে মারা যান। এর একটি বড় অংশ হার্ট ফেলিওর, হার্ট ভালভ ডিজিজ এবং অনিয়মিত হার্টবিটের কারণে ঘটে। যদি এআই—স্টেথোস্কোপ সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে কোটি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে উন্নত ইসিজি বা ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিন সহজলভ্য নয়, সেখানে এই ছোট্ট যন্ত্র চিকিৎসা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

প্রযুক্তি বনাম চিকিৎসক— কে এগিয়ে?
চিকিৎসকরা যদিও দীর্ঘদিন ধরে স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করছেন, তবে অনেক সময় কেবলমাত্র শুনে সঠিকভাবে রোগ ধরা কঠিন। আবার রোগীর ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গের কারণে ভুল সিদ্ধান্তও হতে পারে। এখানে এআই প্রযুক্তি চিকিৎসকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তবে চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই হবে মূল ভরসা।
অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবার বদলে যাওয়া চিত্র
স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় কমাতে এই যন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর হৃদরোগ সংক্রান্ত চিকিৎসায় কোটি কোটি পাউন্ড খরচ হয়। এআই স্টেথোস্কোপ যদি রোগ দ্রুত শনাক্ত করে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করতে পারে, তবে হাসপাতাল খরচ এবং ওষুধের ব্যবহার উভয়ই কমে আসবে।
এছাড়া কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মধ্যে হৃদরোগ কমে গেলে অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এআই স্টেথোস্কোপ শুধু চিকিৎসা নয়, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকেও নতুনভাবে প্রভাবিত করতে সক্ষম।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গবেষকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করা হবে। যেমন—
একসঙ্গে আরও বেশি ধরনের হৃদরোগ শনাক্ত করা। ডেটা এনালাইসিসে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে নির্ভুলতা বাড়ানো। ব্লুটুথ বা ওয়্যারলেস প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও সহজে রিপোর্ট শেয়ার করার সুযোগ তৈরি করা।
এছাড়া উন্নয়নশীল দেশের হাসপাতালগুলোতে সহজে ব্যবহারযোগ্য ও সাশ্রয়ী দামে এই যন্ত্র সরবরাহ করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গি যদিও অধিকাংশ চিকিৎসক এই প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাচ্ছেন, কিছু বিশেষজ্ঞ কিছু ঝুঁকির কথাও বলেছেন। তাদের মতে— রোগী এবং চিকিৎসক যদি শুধুমাত্র এআই—এর ওপর নির্ভর করেন, তবে ভুল শনাক্ত হলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল হলে তথ্য বিশ্লেষণে সমস্যা হতে পারে। ডেটা গোপনীয়তা বা সাইবার নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রোগীর স্বাস্থ্যতথ্য ক্লাউডে পাঠানো হলে তা সুরক্ষিত রাখা জরুরি।
সার্বিক মূল্যায়ন
সব বিতর্ক সত্ত্বেও একথা স্পষ্ট— এআই স্টেথোস্কোপ চিকিৎসা প্রযুক্তির ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় সূচনা করেছে। দুই শতাব্দীর পুরনো যন্ত্র যখন আধুনিক প্রযুক্তির সংস্পর্শে এলো, তখন সেটি কেবলমাত্র ডাক্তারদের শ্রবণক্ষমতাকে অতিক্রম করল না, বরং পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেই নতুন দিগন্ত দেখাল।
প্রসঙ্গত, হার্ট ফেলিওর বা স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী রোগগুলো যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত হবে, তত বেশি জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। এআই স্টেথোস্কোপ সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। মাত্র ১৫ সেকেন্ডেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার এই যুগান্তকারী প্রযুক্তি একদিকে যেমন চিকিৎসকদের কাজ সহজ করবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকেও দেবে নতুন আশার আলো।
যদিও সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে, তবুও বিশেষজ্ঞদের দৃঢ় বিশ্বাস— আগামী দশকে এই এআই স্টেথোস্কোপ হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অপরিহার্য একটি হাতিয়ার। এটি শুধু ডাক্তারদের স্টেথোস্কোপেই বিপ্লব আনবে না, বরং বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ নির্ণয়ের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় লিখবে।




আ.দৈ/ওফা

   বিষয়:  পিত্তথলির পাথর   গলস্টোনের সাধারণ উপসর্গ   প্রচুর পানি পান  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ডিএনসিসির নগর ভবনের সামনে শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের অবস্থান
বিএনপি-জামায়াত বিভাজন, মাঠে আ. লীগের সুযোগ: নাসিরুদ্দিন
এআই’র সাহায্যে লকডাউন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ: এ্যানি
দেশি মুরগি না খাওয়ার’ শিক্ষিকার স্বামী ৫ তলা বাড়ির মালিক
সনদের বাইরে পদক্ষেপের জন্য দায়ভার নিচ্ছে না বিএনপি: আমীর খসরু
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ; সম্পাদক উবাইদা
রাজধানীতে ফায়ার সার্ভিসের গেটের পাশে বাসে অগ্নিকাণ্ড
আ’লীগের ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি,সর্তক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
দিল্লি হামলার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি সঠিক নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অপহ্নত ক্যামব্রিয়ান শিক্ষার্থী সুদীপ্তর লাশ উদ্ধার,গ্রেপ্তার-২
স্বাস্থ্য- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মাসুদ আলম
প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝