হঠৎ করেই দেশে ভুমিকম্পের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এত এক সপ্তাহে দুটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে যশোর মনিরামপুরে এই ভুকম্পন অনুভূত হয়। এছাড়া এ মাসেই তিনবার ভুমিকম্পে কেপে ওঠে দেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ঘন ঘন মৃদু কম্পন দেশে বড় ভুমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। দেশের অভ্যন্তর থেকেই ভুমিকম্পের উৎপত্তি আশঙ্কা আর ও বাড়িয়ে তুলছে। বাংলাদেশ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগ স্থলে রয়েছে। এর বাইরে দেশের অভ্যন্তর আরও চারটি বড় ধরনের ভূ-ত্বত্ত্বিক গ্যাপ রয়েছে। এর বাইরে ছোট ছোট ভূ-চ্যুতি রয়েছে অনেক। সেখান থেকে শক্তি ক্ষয়ে ছোট ছোট ভুমিকম্পের উৎপত্তি হচ্ছে। এসব ভূ-চ্যুতি আবার চারটি বড় ফাটল রেখার সাথে সম্পৃক্ত।
যেখানে বড় ভুমিকম্পের জন্য শক্তি জমা হয়েছে আছে। বিশেষ করে ঢাকার কাছে মধূপুর ফল্ট এবং সিলেটে অবস্থি ডাউকি ফল্ট দেশের জন্য বিপদজ্জনক মনে করছেন তারা। শনিবার বেলা ২টা ২৭ মিনিটে। রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৫ মাত্রার এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলায়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মনিরামপুরেই। এই নিয়ে চলতি মাসে তৃতীয়বারের মধ্যে ভূমিকম্প অনুভূত হলো।
১৪ সেপ্টেম্বর ভারতের আসামে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ?সাত দিনের মাথায় ২১ সেপ্টেম্বর আবার ভূমিকম্প অনুভূত হয় সিলেট অঞ্চলে। সিলেট বিভাগের জেলা সুনামগঞ্জের ছাতকই এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রুবাইয়াত কবীর বলেন, ৩ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে।? এটি নিম্ন মাত্রার ভূমিকম্প। মনিরামপুর এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।’ বেলা ২টা ২৭ মিনিটে অনুভূত হওয়া এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল রাজধানী ঢাকা থেকে ১৫৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে দূরে আসাম ভ্যালি ও হিমালয়ের মাঝামাঝি।
এটি মাঝারি থেকে ভারী মাত্রার ভূমিকম্প ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এশিয়া মহাদেশের মধ্যে জাপানকে বলা হয় সবচেয়ে ভুমিকম্প প্রবণ দেশ। গড়ে প্রতিদিন ভুকিম্প হওয়ার রেকর্ড রয়েছে সেখানে। ৪ মাত্রার ভুমিকম্প জাপানে এখন স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখা হয়। জাপানের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশও ক্রমেই ভুমিকম্প প্রবণ এলাকায় পরিণিত হচ্ছে। গত এক দশকের ভুমিকম্প পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অতীতের যে কোন সময়ে চেয়ে দেশে ভুমিকম্পের সংখ্যা বাড়ছে। ভুমিকম্পের মাধ্যমে ভূ অভ্যন্তরে যে শক্তি সঞ্চয় হয় তা একটি নির্দিষ্ট সময়ে বের হয়ে আসে।
সম্প্রতি সময়ে ঘন ঘন ভুমিকম্পে বিশেষজ্ঞরা বলছেন বড় ধরণের ভুমিকম্প সংগঠিত হওয়ার জন্য ভূ অভ্যন্তরে অধিক শক্তি জমা হয়েছে। যে কোন মুহুর্তের ভুমিকম্পের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসবে। দেশে ঘন ঘন ভুমিকম্প সংগঠিত হওয়ার কারণ হিসেবে তারা আরও বলছেন দেশের অভ্যন্তরে যেমন ভু-তাত্ত্বিক গ্যাপ রয়েছে। দেশের বাইরে রয়েছে সংযোগ প্লেটের অবস্থান। বিশেষজ্ঞদের মতে অভ্যন্তরীণ গ্যাপ থেকে যেমন ভুকিম্প হতে পারে। আবার বাউন্ডারী প্লেটের সংর্ঘের কারণেও বড় ধরণের ভুমিকম্প সংগঠিত হয়ে থাকে।
ভারত ও বর্মা প্লেটের সংযোগ স্থলে রয়েছে বাংলাদেশে অবস্থান। দেশের অভ্যন্তর থেকে গত ১ থেকে ৪শ বছরের মধ্যে যেমন একাধিক বড় ভুমিকম্প হয়েছে। আবার বাউন্ডরী প্লেটের সংঘর্ষের কারণেও প্রলয়ংকারী ভুমিকম্প সংগঠিত হয়েছে। দেশে ভেতরে এবং বাইরে যেসব গ্যাপ রয়েছে এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এসব গ্যাপে নতুন করে আবার শক্তি সঞ্চয় হয়েছে। এ কারণে দেখা যাচ্ছে সম্প্রতিকালে ভুমিকম্পের প্রবণতা অনেক বেড়েছে।
ভবিষত্যের বাংলাদেশ বড় ভুমিকম্পের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। তাদের মতে ছোট ছোট ভুমিকম্পের কারণে ভুতাত্বিক গ্যাপ থেকে কিছু হলেও শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ঘন ঘন ভুকিম্প এটাও প্রমাণ করছে যে ভু-অভ্যন্তলে অধিক শক্তিও জমা হয়ে রয়েছে। যা থেকে যে কোন সময় বড় ধরণের ভুকিম্প হতে পারে। দেশের প্রখ্যাত ভূমিকম্প ািবশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ন আকতার বলেন, সম্প্রতি সময়ে যে হারে দেশের ভুমিকম্প প্রবণতা বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে অভ্যন্তরীণ চ্যুতি রেখাগুলোতে অধিক শক্তি সঞ্চয় হয়ে আছে।
যে কোন সময় বড় ধরণের ভুমিকম্প হতে পারে। তবে তার মতে এখনো সময় আছে ভুমিকম্পের হাত থেকে রক্ষা পেতে যথাযথ প্রস্তুতি গড়ে তোলা। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি অর্ধে এড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া ভুমিকম্প বিশ্লেষন করলে দেখা যাবে এগুলো যেমন দেশেল অভ্যন্তর থেকে উৎপত্তি হয়েছে। আবার পাশ্ববর্তী দেশ থেকে উৎপন্ন হওয়া ভুমিকম্পের আঘাতও বাংলাদেশের মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। এর মধ্যে বড় ধরণের ভুমিকম্পের পাশাপাশি মাঝারি ভুমিকম্প সংগঠিত হয়েছে।
এ উভয় ধরণের ভুমিকম্প বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ হতে পারতো বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন তিন টেকটোনি প্লেট ছাড়াই দেশের অভ্যন্তরে চারটি ভূ-ত্বাত্ত্বিক গ্যাপ রয়েছে। যেখান থেকে বড় ধরনের ভুমিকম্প সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুপুর ফল্ট ঢাকা শহরের জন্য ঝুকিপূর্ণ। মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এখান ১৮৭৫ সালে যে ভুমিকম্প হয়েছিল তার মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭। এই ফল্ট থেকে সম্প্রতিকালে আরও একাধিকবার ভুমিকম্প সংগঠিত হওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
এ থেকে বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন মধূপুর ফল্টে বর্তমানে অধিক শক্তি সঞ্চয় হয়ে আছে। যা থেকে বড় ধরণের ভুমিকম্প হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাগরতলে সুনামি হলে সোজা বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা নিচু হওয়ার কারণে সাগরের পানির উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে দক্ষিণাঞ্চলে জনবহুণল এলাকা বিলিন হয়ে যেতে পারে।
২০০৪ সালে যে সুনামি হয়েছিল তাতে বাংলাদেশ নিরাপদে ছিল মুলত সুনামির ঢেউয়ের প্রধান গতিপথের কারণে। কারণ সাগরে যে স্থানে ভুমিকম্প সৃষ্ট সুনামি হয়েছিল সে ফাটল রেখাটি ছিল মুলত উত্তর দক্ষিণ বরাবর। ফলে সুনামির ঢেউয়ের প্রধান গতিপথ ছিল পূর্ব পশ্চিম বরাবর। একারণে সেবার বড় ধরণের আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল দেশ।
কিন্তু বঙ্গোপ সাগরের উত্তর আন্দামান এবং মায়ানমারের মাঝামাঝি বরাবর সাগর তলে যে ৬শ’ কিলোমিটার সাবডাকশন এলাকায় সিসমিক গ্যাপ রয়েছে এখানে ভুমিকম্প সৃষ্ট সুনামি হলে বাংলাদেশ কতটুকু রক্ষা পাবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বেশ সন্দিহান। কারণ এ গ্যাপকে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে সুনামি হওয়ার জন্য অশানি সংকেত মনে করছেন।