ইসলামী শিক্ষার সাথে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় সাধনের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে ইসলামি শিক্ষার প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের করা হতো। এর অংশ হিসেবে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য পরিচালিত নুরানী মক্তবকে ‘জঙ্গী কারখানা’ আখ্যা দিয়ে বন্ধ করা হয় ২০১৭ সালে। সেসময় ভয়ে কেউ মুখ না খুললেও গণঅভ্যুত্থানের পরে মুখ খুলতে শুরু করেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এবিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মক্তবটি আবারো চালু করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অবস্থান জেলা শহর থেকে দূরে হওয়ায় ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষক কর্মকর্তাদের সন্তানদের মানসম্মত ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা ছিলো না। ফলে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলে মক্তব পরিচালিত হতো। ২০১২ সাল থেকে শিশুদের মানসম্মত ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় মসজিদে নুরানী মক্তবটি স্থানান্তর করা হয়। মসজিদের স্থানান্তরের পর থেকে বিভিন্ন অনুদান দিয়ে ভালোভাবে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মক্তবটি বন্ধের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত করতে ‘জঙ্গি কারখানা’ আখ্যা দিয়ে দুই দফায় পুলিশ নিয়ে এসে তল্লাশি চালায় তৎকালীন প্রক্টর ড. মাহবুব। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল উপাচার্যের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদ পরিচালনা পর্ষদের মিটিং হয়। এতে মক্তব পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মসজিদের ইমামকেও রাখা হয়নি। এসময় ড. মাহবুব, তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, অধ্যাপক দেবাশীষ শর্মা, অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ-সহ নয় শিক্ষকের উপস্থিতিতে মক্তবটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পক্ষান্তরে স্কুলের শিশু শ্রেণি এবং প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণিতে আরবি পাঠদানের জন্য স্কুলে অস্থায়ীভাবে দু’জন শিক্ষকও রাখা হয়। কিন্তু করোনার সুযোগে দুজন আরবি শিক্ষককে বাদ দিয়ে আরবি শিক্ষার পথ রুদ্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পরে মক্তবটি আবারো চালু করতে গেলে ড. মাহবুব কর্তৃক হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তৎকালীন মক্তবের শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা।
তৎকালীন মক্তবের শিক্ষক খুরশিদ আলম বলেন, ‘মক্তব বন্ধের পর তৎকালীন প্রক্টর আমাদেরকে হুকমি দিয়েছিল যাতে পুনরায় মক্তব চালুর বিষয়ে কাজ না করি। এছাড়া ক্যাম্পাসের বাইরে কেউ মক্তবটি চালুর চেষ্টা করলে ভয়ে কেউ আমাদের কক্ষ ভাড়া দেয়নি।
মক্তব পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান শেখ বলেন, ‘মক্তব বন্ধ করার জন্য তৎকালীন প্রক্টর ড. মাহবুব মক্তবকে ‘জঙ্গি কারখানা’ আখ্যা দিয়ে দুই দফায় পুলিশ নিয়ে এসে তল্লাশি করেন। ২০১৭ সালে জঙ্গি কারখানা ট্যাগ দিয়ে মক্তব বন্ধ করে এর পরিবর্তে স্কুলে একটা আরবি ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে করোনার সময়ে সেটাও বন্ধ করে দেয়া হয়।’
এদিকে আজ রবিবার আওয়ামী শাসনামলে সাজানো ক্রসফায়ার, তথাকথিত জঙ্গি নাটক, বিরোধী মতের দমন-পীড়ন এবং শিক্ষার্থীদের হয়রানির মূল হোতা প্রক্টর মাহবুবের বহিষ্কার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। সমাবেশে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা জানি শিক্ষকরা পিতার সমতুল্য।
কিন্তু আমাদের বোনদের পর্দা করার কারণে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে হেনস্তা করেছে অনেক শিক্ষকরা। দ্বীনি শিক্ষার জন্য মসজিদে একটা মক্তব ছিল সেটাও ‘জঙ্গির প্রশিক্ষণ’ নাটক সাজিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রক্টর ড. মাহবুব। এ ধরনের সন্ত্রাসীদের কারণে ক্যাম্পাস অনিরাপদ। আমরা সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে চাই না। ড. মাহবুব ১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছিলেন। তাকে অতিদ্রত বহিষ্কার করা লাগবে।’
আ. দৈ./কাশেম