সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫,
২৭ শ্রাবণ ১৪৩২
ই-পেপার

সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
রাজনীতি
জুলাই ঘোষণাপত্রের নীরব প্রতিবাদ জানাতে কক্সবাজার গিয়েছি: হাসনাত
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Thursday, 7 August, 2025, 7:26 PM  (ভিজিট : 74)

জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে কক্সবাজারে অবকাশযাপন করায় শোকজ করা হয়েছিল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আবদুল্লাহকে। আজ (বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট) নিজের ফেসবুক পেজে ওই শোকজের জবাব প্রকাশ করেছেন তিনি।

শোকজের জবাবে তিনি লিখেছেন, ‘আপনার স্বাক্ষরিত ৬ আগস্ট কারণ দর্শানোর নোটিশটি আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছি এবং এনসিপির প্রতি আমার অঙ্গীকার ও দায়বোধ থেকেই আমি এই ব্যাখ্যা লিখছি।’

তিনি লেখেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের জন্য। এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশায়, যেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এই সরকার গঠিত হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, যা সেই মানুষগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করবে।’

ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় সেই মানুষদের কথা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, যারা অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। শহিদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি।’

হাসনাত আবদুল্লাহর ভাষ্য, ‘ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু উপাদান দেখি, যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের উপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।’

তিনি দাবি করেন, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি জানতে পারেন আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেককেই ঐ দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’

‘এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই’, জানান হাসনাত আবদুল্লাহ। বলেন, ‘উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একইসঙ্গে এটি ছিলো একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।’

তিনি জানান, ৪ আগস্ট রাতে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবহিত করেন ভ্রমণের ব্যাপারে। তার ভাষায়, ‘তিনি আমাকে জানান যে, তিনি আহ্বায়ক মহোদয়কে বিষয়টি জানাবেন। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন যে, আহ্বায়ক মহোদয় এতে সম্মতি প্রদান করেছেন।’

হাসনাত জানান, এই ভ্রমণে তার সঙ্গে যোগ দেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি।
তবে তিনি অভিযোগ করেন, বিমানবন্দর থেকে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ রেকর্ড করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তা মিডিয়ার হাতে তুলে দেয়। তার ভাষায়, ‘কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ সেইসব উপস্থাপন করেছে।’

তিনি আরও লেখেন, ‘কিছু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে—যখন তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন না।’

গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, এই একই প্যাটার্নে হাসিনার আমলেও বিরোধী দলের নেতাদের নামে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন চালানো হতো।’

তাসনিম জারাকে ঘিরে যে কুৎসা রটানো হয়েছে, তা নিয়ে হাসনাত বলেন, ‘শুধুমাত্র একজন নারী হওয়ার কারণে তাসনিম জারাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হয়। কিছু মিডিয়া তাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর শিরোনাম প্রকাশ করে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতিতে নারীদের নিরুৎসাহিত করা।’

তিনি লেখেন, ‘জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। অভ্যুত্থানের পরও একজন নারীর বিরুদ্ধে এমন হীন আক্রমণ কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

শোকজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্টির উচিত ছিল এই গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। তার পরিবর্তে পার্টি এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রকাশ করেছে, যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উসকে দিয়েছে।’

হাসনাত দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে দেয়া শোকজ ‘বিধিবহির্ভূত’। বলেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা বাই-লজের কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই, কারণ আমি পার্টির কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি।’

সবশেষে তিনি লেখেন, ‘আমি এনসিপির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং মনে করি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই আমাদের দল রাজনৈতিকভাবে আরও পরিণত হবে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার সুযোগ দেয়ার জন্য।’

আ.দৈ/আরএস

   বিষয়:  জুলাই   ঘোষণাপত্রের   নীরব   প্রতিবাদ   জানাতে   কক্সবাজার   গিয়েছি   হাসনাত  
আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারি চাকুরিজীবীদের কাজে ফাঁকি দেয়ার সযোগ নেই: দুদক চেয়ারম্যান
জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের অনুমোদন বাতিলের আল্টিমেটাম
সেই আনিসার পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই
হারুন-বিপ্লবসহ পলাতক ৪০ পুলিশের পদক প্রত্যাহার
‘নাটক কম করো পিও’, তিশার উদ্দেশে বললেন শাওন
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

আটলা গ্রামের তরুণ যুবকদের উদ্যোগে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
পানির দাবিতে পল্লবীতে কালশী রাস্তা অবরোধ বিহারী ক্যাম্পবাসীর
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কমিটি, আহ্বায়ক- কিবরিয়া, সদস্য সচিব- ইমরান
অর্থপাচার মামলায় ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস পেলেন জি কে শামীম
আবাসিক হোটেলে প্রেমিকের সঙ্গে রিয়া মনি, ভিডিও ফাঁস করলেন হিরো আলম
রাজনীতি- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik@gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝