ছবিতে- ইনসাইটে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সজীব ও রাজীব দুই ভাই
পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যা মামলায় আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ নিয়ে সোহাগ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সজীব ও রাজীব আপন দুই ভাই। এপর্যন্ত মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। আজ রোববার (১৩ জুলাই) ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গতকাল সকালে পৃথক অভিযান চালিয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই দুইজনই এজাহার ভুক্ত আসামি।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দুর্গাপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন, তারেক রহমান রবিন ও টিটন গাজীকে গেপ্তার করে পুলিশ। তাছাড়া র্যাবের পৃথক অভিযানে আলমগীর ও মনির ওরফে ছোট মনিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করা হয়।
তবে বর্তমানে রাজধানীসহ সারাদেশে খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মব সহিংসতা, মাদক চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অনেক বেড়েছে। এসব কারণে দেশের আইনশৃঙাখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জনগণের জানমাল রক্ষার পাশাপিশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পরিকল্পিতভাবে রাজধানীসহ সারাদেশে একযোগে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশেষ চিরুনি অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। আজ রোববার (১৩ জুলাই) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিন পর্যন্ত তারা সারা দেশে এ ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারবেন।
আজ রোববার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১১তম সভা শেষে বিশেষ চিরুনি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন,বর্তমান সরকার জনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী যেকোনো কার্যক্রম কঠোর হস্তে দমন করবে। একই সাথে দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ই অভিযান রোববার থেকেই শুরু হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মিটফোর্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ি সোহাগ হত্যার ঘটনায় দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, সভ্য সমাজে এটা মানা যায় না। দেশব্যাপী সাম্প্রতিককালে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত তৎপর ও ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশনে যাচ্ছে এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করছে।
আজ রোববার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের আরো বলেছেন, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও নির্বাচনপূর্ব স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিশেষ চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর মিটফোর্ডে যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক ও বর্বরোচিত। সভ্য সমাজে এমন ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মিটফোর্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৯ জন আসামির মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই মামলার তদন্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো শিথিলতা ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি বলেন,‘অপরাধী যেই হোক না কেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। খুলনায় সম্প্রতি আরেকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মিটফোর্ডের ঘটনায় কেউই পুলিশের ‘ট্রিপল নাইন’ নম্বরে ফোন করেনি। এমনকি পাশেই আনসার সদস্যরা থাকলেও তাঁদের কেউ কিছু জানাননি।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশে খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাস, মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি এখন বিশেষ চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবে। তিনি বলেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে । সেই লক্ষ্যে নির্বাচনপূর্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চিরুনি অভিযান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
গত ৯ জুলাই রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯)। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাঁকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয়। তাঁর শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। গতশনিবার সন্ধ্যায় এই মামলার দুই আসামিকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল। হত্যা মামলার আরও দুই আসামিকে নিজেদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
আ. দৈ./কাশেম