আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে প্রায় দুই কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের সুনিদিষ্ট অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের সহায়তায় দুদকের একটি টিম অভিযান চালিয়ে বিএফআইইউ'র সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে। এরপর গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে হাজির করে প্রায় দেড় ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৫দিনের রিমান্ডের আবেদনসহ ঢাকা সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত আসামি মাসুদ বিশ্বাসকে ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সাথে মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদনটি শুনানির জন্য ঢাকা দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দেন। ফলে রিমান্ডের এই আবেদনটি রোবার (১৯ জানুয়ারি) শুনানি হতে পারে বলে জানান দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে আজ শনিবার দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আনার পর টানা দেড় ঘন্টা নানা দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার,অবৈধ সম্পদ অর্জন,জালিয়াতি এবং মানিলন্ডারিংসহ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লোপাটের বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়।
দুদক কার্যালয়ের সামনে মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, সুনিদিষ্ট অভিযোগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে তারা কেউ ছাড় পাবে না। তাদেরকে কারাগারে যেতে হবে, আদালত জামিন দিলে বাইরে থাকবেন, অন্যথায় তাকদরকে কারাগারেই থাকতে হবে।
দুদক মহাপরিচালক বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহযোগিতা নিয়ে মাসুদকে বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে প্রায় দুই কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগের একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে তাকে। তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংসহ আরো অনেক অভিযোগ আছে। রিমান্ডে এনে সেসব অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
দুদকের এই কর্মকর্তা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ পর্যন্ত যাদের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। অনিয়ম দুর্নীতির মামলার যারা আসামি সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। তিনি বলেন, গত ২ জানুয়ারি বিএফআইইউ'র সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মাসুদ বিশ্বাস নিজ নামে এক কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৬২২ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করে; তা নিজ ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ ও অর্থপাচারের অভিযোগ পাওয়ার পর গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। অভিযোগ তদন্তে সংস্থাটির উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
বিএফআইইউয়ের সাবেক এই প্রধানের বিরুদ্ধে দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগটি ঘুসের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে সেটির শেষ টানা, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজের ব্যাংক থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের প্রতিবেদনকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে না পাঠিয়ে ‘সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন’ হিসেবে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
আ. দৈ. /কাশেম