বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার বেশ কয়েকটি জায়গায় কাচের বোতল ঝুলিয়ে রেখেছে বিএসএফ। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্ত থেকে পাওয়া কিছু ছবিতে দেখা গেছে ওই কাচের বোতলগুলো আসলে মদের খালি বোতল। স্থানীয়রা বলছেন, ওই খালি বোতলে কী না কী রেখে দিয়েছে বিএসএফ! তারা আতঙ্কে আছেন এই বোতল ঝোলানোর ঘটনায়।
৫১ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেলিম আলদীনকে জানান, ‘এটি নতুন কোনও স্থাপনা নয়। বেড়াটির সুরক্ষার জন্যই তারা বোতল ঝুলিয়েছে। যদি কেউ রাতের আঁধারে বেড়া তুলে নিয়ে যায় সেজন্য তারা (বিএসএফ) শূন্যরেখায় বেড়া দিয়ে নিজেরাই দুশ্চিন্তায় আছে। এজন্য তারা এই প্রটেকশনটি ব্যবহার করেছে।’
জানা যায়, গত বুধবার দুপুরে ভারতের কোচবিহার জেলার বিএসএফ শিবির থেকে কয়েকজন সীমান্তরক্ষী কাঁটাতারের বেড়ায় ওই খালি কাচের বোতলগুলো ঝুলিয়ে দেয়।
কাঁটাতারের বেড়ায় বোতল কেন?
শুধু যে পাটগ্রাম সীমান্তে নতুন করে দেয়া কাঁটাতারের বেড়ায় খালি বোতল রয়েছে, তা নয়। বিএসএফ কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক সীমান্ত বেড়াতেই কাচের বোতল ঝোলানো থাকে। দক্ষিণবঙ্গে পেট্রাপোল সীমান্ত চেকপোস্টের কাছেই এক জায়গায় বিএসএফ যেখানে একসারির বেড়া বা সিঙ্গল রো ফেন্সিং দিয়ে রেখেছে, সেখানেও খালি কাচের বোতল দেখা গেছে।
এক বিএসএফ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘কেউ বেড়া কাটতে চাইলে অথবা নাড়াচাড়া দিলে কাচের বোতলে শব্দ হবে বা সেটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যাবে। সেই শব্দে কাছাকাছি থাকা বিএসএফ প্রহরী সজাগ হয়ে যেতে পারবেন- সেজন্যই এরকম একটা ব্যবস্থা। দিনের বেলা থেকেও রাতের অন্ধকারে প্রহরীদের সজাগ করার জন্য বেশ কার্যকর এটা।’
তিনি বলেন, ‘এটা পাকাপাকি ব্যবস্থা নয় কখনই। স্থানীয়ভাবে এরকম নানা ব্যবস্থা করে নিতে হয় সীমান্তে- যেখানে যেরকম প্রয়োজন, সেখানে সেরকম ব্যবস্থা করতে হয়।’
এক-সারির বেড়া ও ত্রিস্তরীয় বেড়া
লালমনিরহাটের দহগ্রাম এবং তিন বিঘা করিডোরের কাছে সীমান্তের জিরো লাইনে যে বেড়া দেয়া হয়েছে, সেটা এক-সারির বেড়া।
এগুলো চিরাচরিতভাবে যে উঁচু লোহার খুঁটিতে ৩ স্তরের কাঁটাতার দেয়া বেড়ার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিএসএফ বলছে, যেখানে জিরো লাইনের দেড়শ গজের মধ্যে কোনো ধরনের নির্মাণকাজ করা সম্ভব নয়, সেসব জায়গায় ভারতের অংশে এই সিঙ্গল রো ফেন্সিং বা এক-সারির বেড়া দেয়া হচ্ছে।
যেকোনো ধরনের কাঁটাতারের বেড়াই চোরাচালানকারীরা কেটে ফেলে অনেক ক্ষেত্রে। তাই এখন নতুন এক ধরনের কাঁটাতার ব্যবহার করা শুরু করছে বিএসএফ, যা কাটা প্রায় অসম্ভব, এমনটাই জানা যাচ্ছে বিএসএফ সূত্রে।
আবার অনেক সময়ে দেখা যায় সোনা, রুপো, ফেনসিডিল পাচারের জন্যও সীমান্তের একদিক থেকে প্যাকেট বেড়া টপকিয়ে অন্য দিকে ফেলে দেয়া হয়। এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যেখানে সীমান্তের ওপরে দিয়ে কপিকলের সাহায্যে গরু একদিক থেকে উঠিয়ে দিয়ে অন্যদিকে নামিয়ে দেয়া হয়।
অবৈধভাবে মানুষ পারাপারের জন্যও ত্রিস্তরীয় বেড়ার ওপর দিয়ে মই লাগিয়ে দিয়ে সেটিকে সেতু হিসাবে ব্যবহার করার কথাও জানা যায়। এক্ষেত্রে কাঁটাতারের বেড়ার দুদিকে দুটি এবং বেড়ার ওপর দিয়ে আরেকটি মই ব্যবহার করা হয়। এই অবৈধ পাচার এবং পারাপার আটকাতে সীমান্তের বেড়ারও অনেক ওপর পর্যন্ত নাইলনের জাল দেয়া হয়েছে, যা টপকানো কোনও মতেই সম্ভব নয় বলছে বিএসএফ।
অত্যাধুনিক নজরদারির ব্যবস্থা
লালমনিরহাটের সীমান্তে কাচের বোতল ঝুলিয়ে সতর্ক করার ব্যবস্থা করেছে বিএসএফ ঠিকই, তবে একইসঙ্গে তারা নানা সীমান্তে ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিক নজরদারি ব্যবস্থা।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অরক্ষিত বা ভালনারেবল জায়গা চিহ্নিত করেছে বিএসএফ, যেখান দিয়ে সীমান্ত-অপরাধ হচ্ছে। চিহ্নিত জায়গাগুলোতে প্রহরীরা তো থাকবেনই আগের মতো, কিন্তু তার সঙ্গে সমন্বিত একগুচ্ছ অন্য ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
নতুন সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একসারি কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হবে এবং একইসঙ্গে নজরদারির জন্য একাধিক বৈদ্যুতিক যন্ত্র এবং অত্যাধুনিক ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সঙ্গে প্রহরীদের সতর্ক করার জন্যও কিছু যন্ত্র লাগানো হয়েছে।
আ.দৈ/এআর