শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫,
৫ মাঘ ১৪৩১
ই-পেপার

শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
বিশেষ সংবাদ
শিশু হত্যা গুম ও নির্যাতন বাড়ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
Publish: Saturday, 28 December, 2024, 7:06 PM  (ভিজিট : 38)

সারাদেশে শিশু হত্যা গুম ও নির্যাতন বাড়ছে। গত ২২ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি বাজার থেকে বাড়ি ফিরে শিশুদের সঙ্গে খেলা করতে যায় মুনতাহা। কিন্তু বিকেল হলেও মুনতাহা বাড়ি না ফেরায় সন্ধান পাওয়া যায়‌নি। নিখোঁজের ৭ দিন পর বাড়ির কাছ থেকে শিশু মুনতাহার (৫) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মুনতাহা সিলেটের কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। নিজ বা‌ড়ির পুকুর থেকে শিশু‌টির লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনার সঙ্গে মুনতাহার প্রতিবেশি আফিলজান জড়িত বলে পুলিশ জানিয়েছে। মুলত পাবারিক কলহের জেরে এই ঘটনা ঘটে। যশোরের ঝিকরগাছায় কানের স্বর্ণের দুলের জন্য সাদিয়া খাতুন (৭) নামে এক শিশুকে হত্যা করেছে মাদকাসক্ত এক নারী। নিহত সাদিয়া হাজিরবাগ ইউনিয়নের মাটিকোমরা গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বাবলুর রহমানের মেয়ে। ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয় সাদিয়া। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে রাত ১১টার দিকে স্থানীয়রা তার বাড়ির পাশে একটি বাঁশবাগানে মরদেহ দেখতে পান।

এ সময় তারা পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তার মরদেহ উদ্ধার করে। মুনতাহা বা সাদিয়া নয়। সম্প্রতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিশু হত্যা গুম নির্যাতনে র মতো ঘটনা অনেক বেড়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশির বেশি জড়িত। নানা কারণে শিশুদের পারিবারিক হলহসহ নানা ঘটনার প্রওিতশোধ নি তে শিশুওদের বেছে নেয়া হচ্ছে। প্রথমে গুম করা হচ্ছে। মুক্তিপণ চেয়ে পরিবারের কাছে ফোন দেয়া হয়। পরে শিশুদের লাশ পাওয়া যাচ্ছে খালে, বিলে অথবা বাশ বাগানের ভেতরে। চলতি সপ্তাহেই চাঞ্চল্যকর দুই শিশু মুনতাহা ও সাদিয়া হত্যার ঘটনাকে ক্রেন্দ্র করে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেন এই হঠাৎ শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে- মাদক ও পারিবারিক কলহের কারনে এসব ৯০ শতাংশ শিশুদের প্রতি পারিবারিক সহিংসতার শিকার বেড়েই চলছে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের মধ্যে, মুনতাহা ও সাদিয়াসহ ৬জনকে হত্যা করা হয়েছে, ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ১২ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণ বা গণধর্ষণ করা হয়েছে। সম্পতি ফরিদপুরে এক সরকারি কর্মকর্তার অন্যায় আচরণে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখনকার শিশুরা তার মর্যাদার ব্যাপারে খুবই সচেতন। চট্টগ্রামে এক শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আত্মহত্যা করেছে। হাসপাতালে ওষুধ আনতে গিয়ে গত ১০দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার রাধানগর এলাকার আপু মিয়ার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (৩০)। ১০ দিন ধরে ১৭ মাসের অবুঝ শিশু তাসনেহা তার মাকে খুঁজে পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত তার মায়ের কোল খুঁজছে। কিছুতেই কান্না থামাতে পারছেন না। কখনো বাবা আবার কখনো অন্য স্বজনের কোলে ঠাঁই হচ্ছে তার।

তবে কারও কোলে গিয়েই অবুঝ শিশুটির কান্না থামছে না। তার চোখ দুটি যেন খুঁজে ফিরছে মাকে। কিন্তু কোথাও নেই তার মা। গত রোববার থেকে তার স্ত্রী নিখোঁজ রয়েছেন। মা নখোজ থাকায় ছোট্ট শিমুর উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এভাবের মায়েঢর অপরাধের বলি হচ্ছে ছোট্ট শিশুরা। দেশে এক থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই প্রতি মাসে সহিংস পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। প্রায় ৯০ শতাংশ শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার শিকার হয়েছে। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ পারিবারিক সহিংসতার এই মাত্রাকে উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি বলেছে, প্রতি মাসে সাড়ে চার কোটি শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

শিশু সুরক্ষায় অগ্রগতি সত্ত্বেও সহিংসতা, নিপীড়ন ও শোষণ-বঞ্চনার কারণে লাখ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শিশুদের বিরুদ্ধে ৫৭১ ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের অপরাধে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে এমজেএফ। এক বিবৃতিতে কন্যাশিশুদের প্রতি চলমান যৌন সহিংসতায় ঘটনায় এই দাবি জানায় এমজেএফ। কন্যাশিশুদের প্রতি চলমান যৌন সহিংসতা মোকাবিলায় দ্রুত একটি পৃথক শিশু বিষয়ক কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। এতে বলা হয়, সম্প্রতি ৯ বছর বয়সী এক শিশুকে নির্মমভাবে ধর্ষণের ঘটনাটি আবারও আমাদের সমাজে কন্যাশিশুদের প্রতি সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি সামনে এনেছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম কন্যাশিশুর সুরক্ষা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবের বিষটি তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার শিশুর বয়স ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে, যার মধ্যে পথশিশু, প্রতিবন্ধী শিশু, আদিবাসী শিশু এবং শিশু গৃহকর্মী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট চেয়ারপারসন কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, যারা শিশুদের নির্যাতন করেন, তাদের অধিকাংশই শিশু নির্যাতন বন্ধের আইন সম্পর্কে জানেন না। আমরা শিক্ষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা বলি। আমাদের সংগঠন ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট থেকে এ বিষয়টি শিক্ষকদের জানানোর উদ্যোগ নিয়েছি। শিশু নির্যতনের বিষয়ে একটা সামাজিক আন্দোলন ছাড়া পরিবর্তন আনা কষ্টকর হবে। শিশু অধিকার কমিটি ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) নূরুন নাহার ওসমানী বলেন, শিশু নির্যাতন বন্ধে নীতি, পরিপত্র ও আইন আছে। যাঁদের এগুলো প্রয়োগ করার কথা, তাঁরাও কাজটি প্রায় ঠিকভাবে করছেন না। এখন স্কুলের শিক্ষার্থী, শিশু গৃহকর্মী, পথশিশু সবার কথা ভাবতে হবে। শিশুরা প্রথমে আদর্শ মানে মা-বাবাকে। তারপর যে শিক্ষক সবচেয়ে ভালো, তাঁকে। এ জন্য মা-বাবা ও শিক্ষকদের আচরণ শিশুদের ভীষণভাবে প্রভাবিত করে।

আমাদের নিজেদের শিশুদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করছি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে। প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে ঠিক হলে এটা একটা সামাজিক আন্দোলনের মতো হতে পারে। শিক্ষক নিয়োগের সময়ও দেখতে হবে তিনি কতটুকু শিশুবান্ধব ও মানবিক। লায়লা খন্দকার এন্ডিং লিগ্যালাইজড ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট চিলড্রেন গ্লোবাল প্রোগ্রেস রিপোর্ট মতে, সারা বিশ্বে ২ থেকে ১৪ বছর বয়সী প্রায় ১০০ কোটি শিশু তাদের বাড়িতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ টু এন্ড অল করপোরাল পানিশমেন্ট অব চিলড্রেন ১৫০টি গবেষণার ফল বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, শাস্তি প্রত্যক্ষভাবে শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে, পরোক্ষভাবে শিশুর মানসিকতাকে বিপর্যস্ত করে।

তাদের শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশেও এর বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা আছে। শাস্তি শিশুর মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব তৈরি করে। শিশু যাঁদের সবচেয়ে বিশ্বাস করে, তাঁদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ নিতে পারে না। এর ফলে শিশু বয়সে যারা শাস্তির শিকার হয়, বড় হলে তারা মনে করে ঘনিষ্ঠজনদের প্রতি সহিংস আচরণ করা যায়। বিশ্বে প্রায় ৫৩টি দেশ আছে, যেখানে সব ধরনের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন পাস হয়েছে। শাস্তি থেকে সুরক্ষা পাওয়া শিশুদের মৌলিক অধিকার।

আ. দৈ/ আফরোজা 




আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে রিভিউ শুনানি রোববার
বড় জয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের
নব্য দখলদার ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা জামায়াত আমিরের
বিদায়ী সরকারের টিসিবির ৩৭ লাখ ফ্যামিলি কার্ডই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা
আগামী বাজেট হতে পারে আট লাখ কোটি টাকার
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

ফরিদপুরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতারা গন সংযোগে ব্যস্ত
চায়না পোশাকে সয়লাব দেশ
দুদকের মামলায় বিএফআইইউয়ের মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার
দক্ষতা ও নিষ্টার পুরস্কার, দুদকের মহাপরিচালক-পরিচালক পদে পদোন্নতি
রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে: সালাউদ্দিন
বিশেষ সংবাদ- এর আরো খবর
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মাসুদ আলম

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : [email protected]
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝