অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক খন্দকার ফজলে রশিদ। ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে তিনি বিএনপি ব্যবসায়ীদের কোনো প্রকার ঋণ না দেয়ার নির্দেশনা দিতো। ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ব্যবসাসীদের খুঁজতেন তিনি। অথচো ৫ আগস্টের পর রূপ বদলে বিএনপি হয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, গত ৬ বছর ধরে খন্দকার ফজলে রশিদ এই ব্যাংকে পরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। অগ্রণী ব্যাংক থেকে এই ৬ বছরে আওয়ামী লীগের লোকজনকে ব্যাপক ঋণ দেয়া হয়েছে। এই সময়ে অগ্রণী ব্যাংকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে । ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে ছড়িত ছিলেন তিনিও। তার আমলে সবচেয়ে অগ্রণী ব্যাংকে নামে-বেনামে ঋণ দেয়া হয়েছে। এর মূলহোতা তিনিই ছিলেন। আওয়ামী লীগের সহচর হয়ে কাজ করেছেন অগ্রণী ব্যাংকে। তিনি আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সহচর ছিলেন। তাদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে ঋণ দেয়ার জন্য বোর্ডে সুপারিশ করতেন। তার চাওয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হতো বোর্ডে। ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে তিনি তার একটি বড় ধরনের কমিশন নিতেন। ব্যাংকের মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা তিনি পাচার করেছেন।
তথ্যে দেখা যায়, সর্বশেষ অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ পরিমাণ দাড়িয়েছে ২১ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। খেলাপির হার ৩০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অথচো ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিলো ৫ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ৬ বছরে তিনগুন বেড়েছে খেলাপির ঋণের পরিমাণ।
ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা বলেন, খন্দকার ফজলে রশিদের সুপারিশে অগ্রণী ব্যাংকে নামে-বেনামে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তিনি আওয়ামী ব্যবসাীদের যথাযথ যাচাই-বাছাই ছাড়া অযোগ্যদের ঋণ দিয়েছেন। এভাবে অযোগ্যদের ঋণ ফলে খেলাপি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
এব্যাপারে জানতে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নাম প্রকাশে না শর্তে বলেন, ‘খন্দকার ফজলে রশিদ ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি নিজেকে পুরো পরিবর্তন করে ফেলেছেন। তিনি নাকি বৈষম্যহীন ছাত্রদের পক্ষে কাজ করেছে। এছাড়া তিনি বিএনপির শুরু শুরু কথা বললেন। তিনি নিজেকে বুঝাতে যাচ্ছেন তিনি বিএনপি করতেন। তিনি কখনো আওয়ামী লীগ করেননি। তার এই ভোল পাল্টানো নিয়ে আর্থিকখাতে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। বেশির ভাগ মন্তব্যেই উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগের হয়েও এখন ভোল পাল্টালেন তিনি। তাই এ ধরণের লোককে দ্রুত ব্যাংক থেকে অপসারণ করা উচিত।
তিনি আরো বলেন, এখন কেউ বিএনপির রাজনীতি করলেই সেই ব্যক্তি বিএনপির নয়। তাদের বিগত দিনের আমলনামা আমাদের কাছে আছে। আমলনামা দেখে দেখে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সুবিধা নিয়ে এখন এসে আবার বলবে, আমি বিএনপির লোক। সেই রাজনীতি আর কাউকে করতে দেয়া। তারা ফ্যাসিবাদি, ব্যাসিবাদিও সহচর হয়ে থাকবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আইনের দুর্বলতাই পরিচালকদের অনিয়মের সুযোগ তৈরি করেছিলো আওয়ামী লীগ। আইন শক্তিশালী না হলে এমন দুর্নীতি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তাই ব্যাংক খাতের এই পরিস্থিতি পুরো অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ লুটপাট বন্ধে কঠোর আইন এবং কার্যকর তদারকি এখন সময়ের দাবি।
এব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক খন্দকার ফজলে রশিদকে মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
এব্যাপারে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদকে মোবাইল করলে তিনিও ফোন ধরেনি।