আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনভিত্তিক একক প্রার্থী চূড়ান্তের প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে বিএনপি। দলীয় সূত্র বলছে, চলতি মাসেই অন্তত আড়াইশ আসনে একক প্রার্থীদের নাম ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, এসব আসনের মধ্যে অন্তত ৬০টিতে দল একেবারেই নির্ভার। এসব আসনে বিএনপির শীর্ষস্থানীয়, ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতারা একক প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। কিছু আসনে মিত্রদের জন্য জায়গা রাখা হলেও, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার আসনে বিএনপি নিজের প্রার্থীই মনোনয়ন দেবে বলে জানা গেছে।
দলের হাইকমান্ড থেকে ফোনে কল করে কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীকে ইতোমধ্যে মাঠে নির্বাচনি গণসংযোগে নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারণা শুরু করেছেন।
প্রতিদিনই বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আসনভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডাকা হচ্ছে। সেখানে প্রার্থীদের ভোটারদের মন জয়, স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঐক্য বজায় রাখা এবং মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা-১ এ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-১ এ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ঢাকা-৮ এ মির্জা আব্বাস, ঢাকা-৩ এ গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নরসিংদী-২ এ ড. আবদুল মঈন খান, সিরাজগঞ্জ-২ এ ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কক্সবাজার-১ এ সালাহউদ্দিন আহমদ, ভোলা-৩ এ মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, নোয়াখালী-৩ এ বরকতউল্লা বুলু, নোয়াখালী-৪ এ মো. শাহজাহান, লক্ষ্মীপুর-৩ এ শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শরীয়তপুর-৩ এ মিয়া নুরুউদ্দিন অপু, লালমনিরহাট-৩ এ আসাদুল হাবিব দুলু, যশোর-৩ এ অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জামালপুর-১ এ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, খুলনা-৩ এ রকিবুল ইসলাম বকুল, নেত্রকোনা-১ এ ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, চুয়াডাঙ্গা-২ এ মাহমুদ হাসান খান, গাজীপুর-৫ এ ফজলুল হক মিলন, সিরাজগঞ্জ-৫ এ আমিরুল ইসলাম খান আলীম, ঢাকা-১৬ এ আমিনুল হক, নেত্রকোনা-৪ এ লুৎফুজ্জামান বাবর, পঞ্চগড়-১ এ ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির এবং ঝিনাইদহ-৪ এ সাইফুল ইসলাম ফিরোজসহ অন্তত ৬০টি আসনে একক প্রার্থী নিয়ে নিশ্চিন্ত বিএনপি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “চমক থাকবে তরুণ প্রার্থীদের মধ্যেই। এবার ইয়াং জেনারেশন ও নারী প্রার্থীরা আগের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে।”
দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এলাকায় সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীরাই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন। এজন্য তৃণমূল পর্যায় থেকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে ডাকা কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী জানিয়েছেন, প্রতিটি আসনে চার-পাঁচজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই করে দুই-তিনজনকে ডাকা হচ্ছে। সভায় মহাসচিব মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ বলেন, বৈঠকে জানানো হয়েছে, খুব শিগগিরই একক প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, “হাইকমান্ড থেকে প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যারা দুঃসময়ে দলের পাশে ছিলেন, ক্লিন ইমেজ ও জনসম্পৃক্ত নেতা—তাদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।”
বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি ফোনে প্রার্থীদের ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। এসব আসনে কাজী রফিকুল ইসলাম, মীর শাহে আলম, আবদুল মুহিত তালুকদার, মোশাররফ হোসেন ও গোলাম মোহাম্মদ সিরাজকে মাঠে নেমে কাজ করতে বলা হয়েছে। বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন জিয়া পরিবারের জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটির একক প্রার্থীকেও মাঠে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরার একটি, নাটোরের একটি এবং ঢাকার পাঁচটি আসনে একক প্রার্থীকে মাঠে নেমে কাজের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে বিএনপির চূড়ান্ত তালিকায় বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় এবং ক্লিন ইমেজের এসব নেতার মধ্যে রয়েছেন গাইবান্ধা-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সচিব আমিনুল ইসলাম।
আ.দৈ/আরএস