মিরপুরের শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচে তেমন রান হয় না, এমন তথ্য সবারই জানা। উইকেট পরিবর্তন করে আরও কালচে করার পর সেটি প্রকট হয়েছে আরও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে ২০৭ রান করেও ৭৪ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানরা গুটিয়ে গেছে মাত্র ১৩৩ রানে।তাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের ধাক্কা কিছুটা সামলে উঠল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন-মেহেদী হাসান মিরাজরা আজ মিরপুরের পিচে বড় বড় টার্ন পেয়েছেন। বিশেষ করে রিশাদ, দলের প্রথম ৫ উইকেটই শিকার করেছেন তিনি। দলের হয়ে শেষ উইকেটও শিকার করেন এই রিস্ট স্পিনার। ৬ উইকেট নিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে গেলেন রিশাদ। আজকের আগে ওয়ানডেতে রিশাদের সেরা বোলিং ছিল ১১ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩৭ রানে ২ উইকেট। বাংলাদেশের প্রথম ডানহাতি স্পিনার হিসেবেও ওয়ানডেতে ৫ উইকেট পেলেন তিনি। আগের সেরা ছিল রাজিন সালেহর। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪/১৬।
২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতে বাংলাদেশকে অবশ্য ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলেন দুই ক্যারিবিয়ান ওপেনার ব্রেন্ডন কিং ও আলিক আথানেজ। ৫১ রান যোগ করার পর আথানেজকে (৩৬ বলে ২৭) ফিরিয়ে স্বস্তি আনেন রিশাদ। ৭৯ রানে কেসি কার্টি (৯) আউট হওয়ার পর দলীয় ৮২ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে ফেরেন কিং। ৬০ বলে ৪৪ রান করে দলের সর্বোচ্চ স্কোরার তিনিই।
এরপর কেউই আর উইন্ডিজ দলের ভরসা হতে পারেননি। এক শ রানের মধ্যেই ৬ উইকেট হারায় উইন্ডিজ। শেই হোপ (৩২ বলে ১৫) কিছুটা চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১১ ওভার বাকি থাকতেই ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা। ৯ ওভার বল করে ৩৫ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নেন রিশাদ। একটি করে উইকেট নেন বাকি দুই স্পিনার তানভির ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে মাত্র ১৬ রান খরচ করেন মিরাজ।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিং করে লেজের ব্যাটারদের দৃঢ়তায় ২০৭ রান করে বাংলাদেশ। মিরপুরে টসে হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। প্রথম ১৩ বলের মধ্যেই আউট হন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার, দলের রান তখন মাত্র ৮। এরপরই নিজেদের গুটিয়ে নেন তিন ও চার নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ৩৩ রান তোলে বাংলাদেশ। দলীয় ফিফটি তুলতে খরচ করে ৯৭ বল!
যদিও সাবধানী ব্যাটিং করেও উইকেট বাঁচাতে পারেননি শান্ত। ২৩তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৭৯ রানে আউট হয়ে যান তিনি। তখন নামের পাশে ৬৩ বলে মাত্র ৩২ রান তার। হৃদয়ের সঙ্গে ৭১ রানের জুটি গড়তে খেলতে হয়েছে ১২০ বল। ৭৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারানো বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায় দলীয় ১১৫ রানে।
৯০ বলে ৫১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি হৃদয়ের ১১তম ফিফটি। সর্বশেষ ছয় ইনিংসে এটি তার চতুর্থ ফিফটি। পাঁচে নামা অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন বড় ইনিংস খেললেও সেটি ছিল ধীরগতির। ৭৬ বলে ৪৬ রান করেন তিনি। ২৭ বরে ১৭ রান যোগ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশকে দলীয় দুই শ পার করান মূলত রিশাদ হোসেন। আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩ বলে ২৬ রান করেন তিনি। ১টি চারের পাশাপাশি হাঁকান ২টি ছক্কা। ৪ বলে ৯ রান করে অপরাজিত থাকেন তানভীর। শেষ ওভারের চতুর্থ বলে মোস্তাফিজুর রহমান রান আউট হলে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
ক্যারিবিয়ানদের হয়ে ইকোনমি দুইয়ের নিচে রাখেন স্পিনার খারি পিয়েরে। ১০ ওভারে ২ মেডেনসহ ১৯ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তিনি। ৭ ওভারে ৩ উইকেট নিলেও ৪৮ রান খরচ করেন জেডন সিলস। দুইটি করে উইকেট নেন রোস্টন চেজ আর জাস্টিন গ্রেভস।