অর্থের তীব্র ঘাটতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ তহবিল নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার কারণে জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী ৯টি শান্তি রক্ষা মিশন থেকে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৫ শতাংশ) শান্তিরক্ষী বাহিনীকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। খবর রয়টার্সের।
জাতিসংঘের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এই ছাঁটাইয়ের আওতায় পড়বে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার সৈন্য ও পুলিশ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসামরিক কর্মী। এদেরকে তাদের সরঞ্জামসহ প্রত্যাহার করা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শান্তিরক্ষী কমানোর এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষা অভিযানের কার্যকারিতা ও প্রভাবকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।
জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বড় তহবিলদাতা হলো যুক্তরাষ্ট্র, যারা মোট তহবিলের ২৬ শতাংশের বেশি সরবরাহ করে। তবে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বকেয়া পড়া তহবিলের পরিমাণ ২.৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি একতরফা সিদ্ধান্ত, যেখানে তিনি ২০২৪ ও ২০২৫ সালের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার শান্তি রক্ষা তহবিল বাতিল করেছেন। হোয়াইট হাউসের বাজেট অফিস ২০২৬ সালের জন্যও তহবিল বাতিলের প্রস্তাব করেছে।
এই ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত মূলত দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, লেবানন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, পশ্চিম সাহারা, কসোভো, সাইপ্রাস, ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে গোলান উচ্চ ভূমি-সংলগ্ন এলাকা, এবং আবিই (সুদান-দক্ষিণ সুদান যৌথ শাসিত এলাকা)-এর শান্তি রক্ষা মিশনগুলোতে প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কারণ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী (২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখের), ৫ হাজার ২৩০ জন শান্তিরক্ষী (৪৪৭ জন নারীসহ) নিয়ে বাংলাদেশ ছিল শান্তিরক্ষী সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে (নেপাল প্রথম ও রুয়ান্ডা দ্বিতীয় স্থানে ছিল)। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের এই গর্বিত যাত্রা শুরু হয়েছিল।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বর্তমানে সংস্থার ৮০ বছর পূর্তির এই সন্ধিক্ষণে সংস্থাটির কার্যকারিতা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যয় কমানোর উপায় খুঁজছেন। সমালোচকেরা যুক্তরাষ্ট্রের একপক্ষীয় তহবিল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে বিশ্বব্যাপী শান্তি রক্ষার উদ্যোগে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন।