গণহত্যাও গুমসহ জগন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিলের পর উহা আমলে নেয়া হলে সংশ্লিষ্টরা আগামীতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রার্থীতার সুযোগ পাবেন না। তাদের প্রার্থীরা প্রথমেই অযোগ্য বলে গণ্য হবে।
ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দাখিলের পর আসন্ন জাতীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার পরিষদ বা প্রতিষ্ঠানের সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক অথবা সরকারি কোনো পদে দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। এমনকি তিনি সরকারি চাকরিও করতে পারবেন না।
ইতিমধ্যে ফরমাল চার্জ দাখিল হয়ে ক্ষমতাচ্যুত পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অনেক সরকারি কর্মকর্তা-পুলিশের বিচার শুরু চলছে। এ ছাড়া জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে।
এদিকে গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট, ১৯৭৩ সংশোধন করে অধ্যাদেশে আইনের ২০(সি) সংযোজন অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি নিম্নলিখিত অবস্থানগুলোতে থাকার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা থাকার যোগ্য হবেন না। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে বা থাকতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না। এ ছাড়া অন্য কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। জারি করা প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, উপধারা (১)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কোনো ব্যক্তি অব্যাহতি বা খালাসপ্রাপ্ত হলে, ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল হলেই তিনি আর জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এদিকে আজ মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদেও এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত সোমবার দিবাগত রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের, ১৯৭৩-এ (২০-সি) সংশোধন করে আইন মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার রাতে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি নিম্নলিখিত অবস্থানগুলোতে থাকার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া বা থাকার যোগ্য হবেন না। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সদস্য, কমিশনার, চেয়ারম্যান, মেয়র বা প্রশাসক হিসেবে নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে বা থাকতে পারবেন না। প্রজাতন্ত্রের কোনো চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন না। এ ছাড়া অন্য কোনো সরকারি পদে অধিষ্ঠিত হতে পারবেন না। এতে আরও বলা হয়, উপধারা (১)-এ যা কিছুই থাকুক না কেন, ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক কোনো ব্যক্তি অব্যাহতি বা খালাস প্রাপ্ত হলে, ওই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য হবে না।
তাজুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এ আরেকটি সংশোধন আনা হয়েছে। এই সংশোধনীর মূল বিষয় হলো, কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিল হয়, তাহলে তিনি দেশের কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য হবেন না। অর্থাৎ, তিনি জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও প্রার্থী হতে পারবেন না।
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করতে তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা খুব দ্রুতই তদন্ত কাজ সম্পন্ন করবেন। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে আওয়ামী লীগের ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হলো।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ইতোমধ্যে আদালতে বিভিন্ন মামলার সাক্ষীরা তাদের বক্তব্য দিয়েছেন দলের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে বলেছেন। এগুলো জুডিশিয়াল ডকুমেন্ট হয়ে গেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে দলের বিরুদ্ধে যে তদন্ত হবে, যে সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ আসবে, তার মধ্যে বিদ্যমান সাক্ষ্য যেগুলো ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, সেগুলো অন্যতম এভিডেন্স হিসেবে গণ্য হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ব্যাপারেই তদন্ত শুরু হয়েছে, ক্রমান্বয়ে তদন্ত যখন আরও আগাবে, তখন যদি প্রয়োজন মনে হয় আরও কোনো দল এর সঙ্গে যুক্ত আছে এবং তাদের ব্যাপারেও তদন্ত হওয়া দরকার, তাহলে আমাদের তদন্ত সংস্থা সেই অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন (সংশোধিত), ১৯৭৩-এর ২০(খ) ধরায় সংগঠনের শাস্তির বিধান আছে। শুধু তাই না, এই উপধারাটিকে বিদ্যমান অন্য আইন থেকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কোনো দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণ হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সেই দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে পারবে। শুধু তাই না, সংশ্লিষ্ট দল-সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো শাস্তি আরোপ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।
তাজুল ইসলাম বলেন, গত বছরের ২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। এতে বলা হয়, গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটকেও দায়ী করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তদন্তের পরই নেওয়া হবে বিচারের ব্যবস্থা।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, তদন্তে অন্য দলের নাম এলে তাদের বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এর আগে গত ৫ অক্টোবর চিফ প্রসিকিউটর জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যে সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হবে। তারই ধারাবাহিকতায় তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ২ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ জমা দেন এনডিএম-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। অভিযোগে বলা হয়, আওয়ামী লীগসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে দায়ী।
এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করছি। এটি পুরোদমে শুরু হলে বিষয়টি কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, তা আমরা তখন জানাতে পারবো।
আ. দৈ./কাশেম