জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘নির্বাচনের ডেডলাইন নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, প্রয়োজনে আগামীকাল নির্বাচন দিন। কিন্তু আমাদের একটি লিখিত নতুন সংবিধান লাগবে। যে সংবিধানে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।’
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের তুলাগাও গ্রামে ‘উঠানে রাজনীতি’ শীর্ষক একটি উঠান বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ওই বৈঠকে হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আপনার উপদেষ্টারা অনেকেই নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে, এটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। আপনাদের জুলাই ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের রক্তের ওপর বসানো হয়েছে। আপনারা জন মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করুণ।’
হাসনাত আবদুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে আরো বলেন, ‘আপনি ঘোষণা দিন যে খেলার নিয়ম চেঞ্জ হয়েছে, এ খেলার নিয়মের একটি আইনগত ভিত্তি দিন, এরপর আপনি আগামী মাসেই নির্বাচন দিন।
আমি নির্বাচিত হই বা না হই আমার দুঃখ নেই। কিন্তু জনগণ যাকে ভোট দিবে সে নির্বাচিত হতে পারবে। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের নির্বাচনের আগে ভাঙ্গা ঘর চেঞ্জ করতে হবে।
আপনি আমাদের ভাঙা ঘরের দরজা পরিবর্তন করবেন না, জানালা পরিবর্তন করবেন না, শুধুমাত্র দারোয়ান পরিবর্তনের জন্যই কি আমরা নির্বাচন করব? শুধুমাত্র দারোয়ান পরিবর্তন করে আমরা ৫০ বছর দেখেছি, টেন্ডারবাজি থামানো যায় নাই, থামানো যায় নাই ভোট ডাকাতি। আমরা ধারণ পরিবর্তন করব। একই সঙ্গে দরজাও ঠিকঠাক মত লাগাবে। এজন্য মুখের কথা বিশ্বাস করি না আমাদের একটি নতুন সংবিধান চাই।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ‘আমরা দেখেছি ভোটের আগে নেতারা টাকা দিয়ে আপনার আমার মুখ বন্ধ করে রাখে। এটা আর আমরা হতে দেব না, সামনে যে নির্বাচন হবে ওই নির্বাচনে আমাদের কিছু শর্ত আছে। ওই শর্তগুলোর লিখিত ভিত্তি দিতে হবে। এটাই রাষ্ট্র সংস্কার। এই দেশ হাজার হাজার মানুষের রক্তে ভেজা, এখানে আমরা মুখের কথা বিশ্বাস করি না।
এগুলোর আইনগত ভিত্তি দিয়েই নির্বাচন দিতে হবে যার পক্ষই যাক। যারা এই নিয়ম ভাঙবে পরবর্তী জেনারেশন যেন তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে ধরতে পারে। রাষ্ট্রের মধ্যে যত অনিয়ম দুর্নীতি হয় এগুলো ভুক্তভোগী হয় সাধারণ মানুষ, কোনো মন্ত্রী-এমপি না। এমপি সবসময় এমপি হয়, মন্ত্রী সব সময় মন্ত্রী হয়। তাদের ছেলে-মেয়েরাও এমপি-মন্ত্রী হয়। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় কিন্তু এই সাধারণ খেটে খাওয়ার মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।’
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের এই মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে ভোটের আগের দিন রাতে ঘরের দরজা টুকা দিত কিছু নেতা, ঘরের ভেতর থেকে আওয়াজ আসত ঘরে আমরা পাঁচজন, এ রকমও হয়েছে। তারা রাতের বেলায় ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে আপনার আমার ভাগ্য কিনত। আর পাঁচ বছর রাস্তাঘাটের কাজে দুর্নীতি-অনিয়ম করত। আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে আমরা আর তাদের টাকার কাছে বিক্রি হবো না। যারা পাঁচ বছর আমাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে তারা যে টাকা দিয়ে ভোট কিনে ওই টাকা কোথায় থেকে আসে একবারও কি আপনার মনে প্রশ্ন আসে না? তারা এ টাকা কোথাও না কোথাও থেকে দুর্নীতি করে এনেছে। এই টাকা নির্বাচনের পর জনগণের কাছ থেকেই আবার তুলে নিবে। ’
দেবিদ্বার উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক জামাল মোহাম্মদ কবীরের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম, এহতেশাম হক, দেবিদ্বার উপজেলা সার্চ কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।