বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্পে টেকসই সাপ্লাই চেইন জোরদার করার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিনিধিরা এবং বিজিএমইএ (বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি) এর নেতারা একটি যৌথ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। এই বৈঠকটির মূল লক্ষ্য ছিল পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অংশীদারিত্বমূলক কৌশল এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া।
আজ বুধবার উত্তরাস্থ বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ৪০টিরও বেশি ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিগন অংশগ্রহন করেন। সভায় টেকসই সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে পোশাক ব্র্যান্ডগুলো এবং বিজিএমইএ কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করতে পারে. সে বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়।
বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএ এর পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন ১ম সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, সহ-সভাপতি মোঃ রেজোয়ান সেলিম, সহ-সভাপতি (অর্থ)মিজানুর রহমান, সহ-সভাপতি ভিদিয়া অমৃত খান, সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক শাহ রাঈদ চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, পরিচালক মোঃ হাসিব উদ্দিন, পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সালাম, পরিচালক নাফিস- উদ- দৌলা, পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম, পরিচালক মজুমদার আরিফুর রহমান, পরিচালক শেখ হোসেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজ, পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান, পরিচালক ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী, পরিচালক রুমানা রশীদ, পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল, পরিচালক সামিহা আজিম, বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটি অন বিজিএমইএ ব্র্যান্ডিং এর চেয়ারম্যান খান মনিরুল আলম (শুভ), বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটি অন বায়ার্স ফোরাম এর চেয়ারম্যান মাশেদ রহমান আব্দুল্লাহ এবং বিজিএমইএ স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ওয়ান স্টপ সেল এর চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ভূঁইয়া। আলোচনার মধ্যে ছিলো পোশাক শিল্পের জন্য বাংলাদেশের পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ২০% শুল্ক আরোপ, সমন্বিত আচরণ বিধি (টহরভরবফ ঈড়ফব ড়ভ ঈড়হফঁপঃ) প্রবর্তন, পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, শ্রম সংস্কার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি, জিএসপি প্লাস থ্রেশহোল্ডের চ্যালেঞ্জ সহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়।
ব্র্যান্ডদের পক্ষ থেকে টেকসই সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে লজিস্টিক উন্নয়ন, এনবিআর ও কাস্টমস বিষযক জটিলতাগুলো নিরসন, টেকসই ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শ্রম পরিবেশ তৈরি এবং পরিবেশগত সাসটেইনেবিলিটির উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বিজিএমইএ এর অন্যতম এজেন্ডা ছিলো পোশাক শিল্পের জন্য একটি সমন্বিত আচরণ বিধি (টহরভরবফ ঈড়ফব ড়ভ ঈড়হফঁপঃ) প্রনয়নে পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতা ও সমর্থন পাওয়া, যা কিনা সাপ্লাই চেইনে সকল অংশীদারদের উপকৃত করবে।
বিজিএমইএ এর পরিচালক নাফিস- উদ- দৌলা একটি পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে দেখান একটি সমন্বিত আচরণ বিধি (টহরভরবফ ঈড়ফব ড়ভ ঈড়হফঁপঃ) কিভাবে নিরীক্ষা প্রক্রিয়া সহজতর করে, কারখানার উপর চাপ কমিয়ে শিল্পকে আরও নৈতিক, টেকসই এবং দায়িত্বশীল করে তুলতে পারে। আলোচনায় শ্রম সংস্কার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান সভায় বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারের সাম্প্রতিক অগ্রগ্রতি তুলে ধরে বলেন, এই সংস্কারগুলো শুধু আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণের জন্যই নয়, বরং একটি টেকসই ও নিরাপদ শিল্প পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য করা হচ্ছে। তিনি ব্র্যান্ডগুলোকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের এই ইতিবাচক পরিবর্তনে অংশীদার হিসেবে কাজ করার আহবান জানান।
বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক সোর্সিং বৃদ্ধি করা এবং আরও উদ্ভাবনী উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশে সরবরাহকারীদের সাথে অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য ব্র্যান্ডদের এর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
ব্র্যান্ড প্রতিনিধিগন বলেছেন, শিল্পে ফ্যাশন ডিজাইনিং এর মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির বিশাল সুযোগ রয়েছে। তারা বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি’তে (বিইউএফটি) টেকনিক্যাল ডিজাইন সেকশন খোলা এবং কারখানা পর্যায়ে তরুন ফ্যাশন ডিজাইনারদের নিয়োগ দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, এটি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকদের কাছে ব্যান্ডগুলোর অন্যতম প্রত্যাশা।
বিজিএমইএ নেতারা পোশাক শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং নৈতিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য শিল্পে বেটার প্রাইসিং মডেল, ইফিশিয়েন্সি মডেল প্রনয়নসহ শিল্পের প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের পাশে এগিয়ে আসার জন্য পোশাক ব্র্যান্ডগুলোকে আহবান জানিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিনিধিগন বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়নে তাদের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।