আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানকে যেকোন সময় সরিয়ে দিতে পারে সরকার। শুধু সরিয়ে না তাদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, দুই ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার ও হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ব্যাংকখাতে সীমাহীন লুটপাট হয়েছে।
লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে এ খাত। এসবের অন্যতম সহযোগী ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া গভর্নর এবং ডেপুটি গভর্নররা। তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপে বহু শিল্পগ্রুপ দেশ থেকে ঋণের নামে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। এর মধ্যে রোববার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমানকে বিমানবন্দরে আটকে দেওয়া হয়েছে। তাকে নামিবিয়া একটি ফ্লাইটে উঠতে দেওয়া হয়নি। রোববার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটকে দেয়।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, রোববার বিকাল পাঁচটার ফ্লাইটে অফিশিয়াল কর্মসূচিতে অংশ নিতে নামিবিয়া যাওয়ার কথা ছিল ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমানের। এই অনুষ্ঠানে তিনিসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১১ জন কর্মকর্তা আমন্ত্রিত ছিলেন। বাকি ১০ জন যেতে পারলেও তাকে ফেরত পাঠানো হয়। হাবিবুর রহমান ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিমানে ওঠার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। পরে ইমিগ্রেশন থেকে তাকে থামিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত চলমান। এমন পরিস্থিতিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তার বিদেশ যাত্রা আটকে দেয়।
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের সময়ে গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর ও সরকারি-বেসরকারি ২৬ ব্যাংকের এমডি ও পরিচালকদের দুর্নীতি অনুসন্ধানে সম্প্র্রতি দুদককে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই তালিকা ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছেও পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আওয়ামী লীগ আমলের এসব গভর্নর এবং ডেপুটি গভর্নরের তালিকা চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের কাছে তালিকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাও মাঠে নেমেছে তদন্তের জন্য। ফলে এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব কর্মকর্তা ফেঁসে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহারকে নিয়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ নির্দেশনায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতিসহ নানা দুর্বলতা নিয়েও তিনি নাটকীয়ভাবে ডেপুটি গভর্নর হন। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতেও তিনি আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর আছেন বলে অভিযোগ কর্মকর্তাদের। এছাড়া তার অধীনস্ত বিভাগগুলোকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় রাখার অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, “কোন প্রকার যোগ্যতা যাচাই ছাড়াই সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নির্দেশে নিয়োগ পান নুরুন নাহার। সাধারণত তিন-চার জনের নাম প্রস্তাব করে সার্চ কমিটি। সেখান থেকে একজনকে নিয়োগের সুপারিশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু নজিরবিহীনভাবে নুরুন নাহারের বেলায় একক নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তিনি ডেপুটি গভর্নর-১ হওয়ার সুবাদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোপনীয় সিদ্ধান্ত লুটেরারা জানতে পারছেন এবং আগাম পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
ঐ কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের বিরুদ্ধে কয়েকবার বিক্ষোভ করা পরেও তাদেরকে সরানো হয়ান। গভর্নর বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছিলো।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক মদদপুষ্ট এস আলম গ্রুপসহ ব্যাংকিং খাতে লুটেরা গোষ্ঠীর সঙ্গে আঁতাতকারী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়নের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করার দাবি জানান।