ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) এবং হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হওয়ার তিন দিন পার হয়ে গেছে। এ সময় প্রার্থীরা নানা ধরনের লিফলেট ও হ্যান্ডবিল নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এবারের নির্বাচনে প্রচারণার পদ্ধতিতে নতুনত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিশেষ করে টাকার আদলে তৈরি লিফলেট।
শুক্রবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে টাকার আদলে তৈরি কিছু লিফলেট ছড়িয়ে পড়ে। বিকেলের মধ্যেই ওই লিফলেট নিয়ে আরাফাত হোসেন, কেন্দ্রীয় সংসদে কার্যনির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী, প্রচারণা শুরু করেন।
আরাফাত হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, প্রচারণার প্রথম দুই দিন তিনি কোনো লিফলেট ব্যবহার করেননি। তবে পরে তিনি এক অভিনব কৌশল গ্রহণ করেন—টাকার আদলে লিফলেট বানিয়ে সেটি ভোটারদের মধ্যে বিতরণ করেন। তিনি বলেন, "অনেকে লিফলেট মনে রাখতে পারছিলেন না, তাই নতুন কিছু করার চিন্তা করলাম। লিফলেট হিসেবে নোটটি সুভেনির হিসেবে গ্রহণ করছেন অনেকেই। এটি রেখে দিচ্ছেন বা মানিব্যাগে রাখছেন।"
এছাড়াও, স্যার এফ রহমান হল সংসদ এর ভিপি প্রার্থী নাঈমুর রহমানও এমনই একটি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে তার লিফলেটটি মার্কিন ডলার এর আদলে বানানো। নোটের মধ্যে তিনি জর্জ ওয়াশিংটনের ছবি পরিবর্তন করে নিজের ছবি বসিয়েছেন এবং মার্কিন সিলমোহরগুলো পরিবর্তন করে নিজের প্রচারণা বার্তা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, "এটা একজন সিনিয়রের পরামর্শে করেছি। শুরুতে আমি বাংলাদেশি টাকার ভাবনা ছিলাম, কিন্তু তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম সাদা-কালো ডলার বানাবো।"
এই ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন আরমান হোসেন (শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক), সাদেকুর রহমান সানি, আবু ছালে মো. হুমায়ুন হেলাল এবং ওয়ালিইউল ইয়ামিন নাবিলসহ আরো অনেক প্রার্থী। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী দিনে আরো প্রার্থী এই ধরনের কৌশল অবলম্বন করবেন।
ভোটারদের প্রতিক্রিয়া-
প্রার্থীদের এই অভিনব প্রচারণা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। মিরহাজুল শিবলী (২০১৮-১৯ সেশনের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী) এটি এক ধরনের মজা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, "এটা বেশ অভিনব, অনেকেই ইন্টারেস্টিং হিসেবে নিচ্ছেন।"
অন্যদিকে, ফরহাদ সাকিব (২০২১-২২ সেশনের গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী) বলেন, "বোরিং লিফলেটের তুলনায় এটি বেশ ভালো। এটা ডাকসুর স্মৃতি হিসেবেও রাখা যাবে।" তবে, রাফিউজ্জামান লাবীব (২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী) কিছুটা নেতিবাচকভাবে দেখছেন, তিনি মনে করেন, টাকার বিষয়টা আনাই ঠিক হয়নি। "এই ধরনের প্রচারণা ভোট কেনার ধারণাকে উসকে দেয়," তিনি মন্তব্য করেন।
মনস্তাত্ত্বিক কারণ-
এমন প্রচারণা কৌশল প্রার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাম্মত মালেকা পারভীন। তিনি বলেন, "আমাদের মনে একটি ধারণা রয়েছে যে টাকা সব কিছু কিনতে পারে। এই ধারণা থেকেই প্রার্থীরা টাকার আদলে লিফলেট বানাচ্ছে। এটি কিছু শিক্ষার্থী ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছেন, আবার কেউ নেতিবাচকভাবেও দেখতে পারেন।"
বৈধতা-
ডাকসু নির্বাচনের আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী অর্থ লেনদেন বা উপঢৌকন দেওয়ার অনুমতি নেই। তবে, এই টাকার আদলে লিফলেট যেহেতু প্রতীকী, তাই এতে কোনো বিধিনিষেধ নেই বলে নিশ্চিত করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, "এটা আসল টাকা নয়, তাই আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে না।"