দেশের তালিকাভুক্ত প্রথম বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবি ব্যাংক পিএলসি। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুনামের সহিত চলছে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ মিজানুর রহমান। এর আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত এমডি ছিলেন। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তাঁর মেধা, বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির নানা সাফল্য বয়ে এনেছেন। ব্যাংকটির আমানত, হিসাবধারীর সংখ্যা, বিনিয়োগ, রেমিট্যান্স প্রবাহ, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও খেলাপি ঋণ আদায়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সূচকে অগ্রগতি হয়েছে।
ব্যাংকটির আগামীর পদক্ষেপ জানতে আজকের দৈনিক-এর অর্থনৈতিক প্রতিবেদক রমজান আলী’র সাথে মুখোমুখি হয়েছিলেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মিজানুর রহমান। তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকের জন্য....
আজকের দৈনিক: নতুন গ্রাহকরা কেন আপনার ব্যাংকে আসবে?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: এবি ব্যাংক তার পণ্য ও সেবার গুণমানের বিষয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণ। ব্যাংকে একদল মেধাবী কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা নতুন উদ্ভাবনী পণ্য এবং সেবা দিতে সক্ষম। ব্যাংকে অনুপ্রাণিত এবং উদ্যোমী কর্মকর্তারা রয়েছেন, যারা নতুন ব্যবসা অর্জন করতে সক্ষম। সর্বোপরি ব্যাংকের দক্ষ পরিচালনা পর্ষদ একটি ভাল কর্পোরেট সুশাসন বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। আমাদের শক্তিশালী মূলধন ও লিকুইডিটি’র পর্যাপ্ততা আছে, যা গ্রাহক পর্যায়ে আমাদের ব্যাংকের দীর্ঘমেয়াদি সাসটেইনিবিলিটি’র বিষয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে। গ্রাহকের চাহিদামাফিক অর্থ পরিশোধ করতে কখনোই ব্যর্থ হয়নি এবি ব্যাংক। গ্রাহকেরদের জন্য ট্রেড অপারেশন অটোমেশন করা, কর্পোরেট ব্যাংকিং-এ নতুন নতুন সেবার সংযোজন করা, ব্যাংকের গ্রাহক সেবার মান উন্নয়ন নিরাপদ ও নির্ভুল সেবার নিশ্চয়তার বিভিন্ন ধরনের সেবা চালু রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরশীল আধুনিক ব্যাংকে রূপান্তরিত; এখানে গ্রীন ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আমাদের ব্যাংকের গ্রাহকরা এবি ব্যাংকের অ্যাপ দিয়ে দেশজুড়ে টাকা লেনদেন করতে পারেন। ইতোমধ্যেই এবি ব্যাংকে ইসলামিক ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিংসহ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম সেবা রয়েছে।
আজকের দৈনিক: প্রান্তিক মানুষের জন্য ক্ষুদ ঋণ দিতে অনেক ব্যাংক তেমন আগ্রহ দেখায় না সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাংকের অবস্থা কি?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবদান অনস্বীকার্য। সার্বিক গুরুত্ব ও ঋণ ঝুঁকি বিবেচনায়, এবি ব্যাংক ছোট ছোট উদ্যোক্তাদেরকে অর্থায়নে বেশ উদ্যোগী ভুমিকায় রয়েছে। আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে প্রচলিত নিয়মাচারের আলোকে ঋণদানে সচেষ্ট আছি। এছাড়া কৃষি ঋণ নিয়ে আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।
আজকের দৈনিক: এবি ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা কেমন?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: এবি ব্যাংক একটি শক্তিশালী ব্যাংক। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুনামের সহিত চলছে। গত ৭ মাসে আমানত বেড়েছে ৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ২৬ হাজারেও বেশি। পুরো ব্যাংকখাতই চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেও আমানত বৃদ্ধি ও হিসাবধারীর সংখ্যা বৃদ্ধি মানেই গ্রাহকের পুরোপুরি আস্থা রয়েছে এই ব্যাংকটির উপরে। এই আস্থা নিয়ে সামনে অনেক দূর এগিয়ে যাবো আমরা। এবি ব্যাংকে টাকা তুলতে এসে কোনো গ্রাহক কখনো ফেরত যাননি। গ্রাহকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের আমানতের নিরাপত্তা। এবি ব্যাংক সেটা সব সময় নিশ্চিত করেছে।
আজকের দৈনিক: খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি এখন কী অবস্থায় আছে?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: খেলাপি ঋণ আদায়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। তবে চাইলে বড় খেলাপিদের কাছ থেকে দিনে দিনে খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব না। এখানে একটা আইনের জটিলতা রয়েছে। সেই জটিলতা ভাঙতে সময়ের ব্যাপার। তবে ছোট ছোট গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য একটি টাস্কফোর্স ও বিশেষ পুনরুদ্ধার দল গঠন করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ফলোআপ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ আদায় নিশ্চিত করতেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত পাঁচ মাসে আমরা প্রায় ১৬শ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করতে পেরেছি এবং পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
আজকের দৈনিক: তিনটি ব্যাংকের সম্পদ যাচাই (একিউআর) নিয়ে কী বলবেন?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ডেলয়েট তিনটি ব্যাংকের অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআর) করছে। এই নিরীক্ষা শুধু এবি ব্যাংকের জন্য নয়। এর আগে চারটি ব্যাংকের কাজ শেষ হয়েছে, এখন তিনটি ব্যাংকের হচ্ছে এবং পরে আরও আটটি ব্যাংকে বিশেষ নিরীক্ষা হবে। এটি মূলত আইএমএফের শর্তের অংশ। আমাদের প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি যাচাই করতেই এই নিরীক্ষা করা হচ্ছে। তাই জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ এবি ব্যাংক নিয়মিত তার আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এখানে ব্যাংক একীভূত করা হবে এমন কিছুই না।
আজকের দৈনিক: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ?
সৈয়দ মিজানুর রহমান: ব্যাংকের ভালো ও নির্ভরযোগ্য বোর্ড অফ ডিরেক্টরস রয়েছে। বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা পরিষদের মধ্যে স্বচ্ছতা আছে। অনেক পরিকল্পনা। একটি ভালো ব্যাংক তৈরি করতে যা যা পরিকল্পনা দরকার সব ধরণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমাদের ব্যাংকিং সেবাকে ‘গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড’-এ উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান, শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এছাড়া আমাদের প্রধান লক্ষ্য ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। এবি ব্যাংক একসময় একটি ব্র্যান্ড ব্যাংক ছিল, আমরা সেই অবস্থান পুনরুদ্ধারে কাজ করছি। আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- নতুন পণ্য ও সেবা চালু করে আমানত বাড়ানো, সাব-ব্রাঞ্চ ও এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট সম্প্রসারণ করা। তাছাড়া করপোরেট ঋণ বিতরণে আপাতত বিরতি, পরিবর্তে কৃষি, এসএমই ও নিরাপদ খাতকে অগ্রাধিকার, উদ্ভাবনী ব্যাংকিংসেবা চালু করা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে আমাদের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করা।