সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশা ও তাদের ছেলে এরিক জাতীয় পার্টির হাল ধরতে যাচ্ছেন। এরিক বলেছেন, এখন থেকে জাতীয় পার্টি চালাবে তরুণ প্রজন্ম।
আজ ১৪ জুলাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটিতে তার স্মরণে এরশাদ পুত্র এরিকের বারিধারার বাসায় বাদজোহর এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বাবার স্মৃতিচারণ করে এরশাদপুত্র বলেন, আমার বাবা মারা গেছেন ছয় বছর হলো। বাবা মারা যাওয়ার সময় তিনি প্রিয় দুটো জিনিস রেখে গেছেন এই পৃথিবীতে। একটি হলো জাতীয় পার্টি এবং একটি হলো তার ছেলে আমি এরিক এরশাদ। বাবার মৃত্যুর পর আমাকে অমানবিক অত্যাচার, দুঃখ-কষ্টের মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে, আপনারা সবাই সেটা জানেন। কিন্তু পাশে আমার সাহসী মা বিদিশা এরশাদ আছেন দেখে এখনো পর্যন্ত টিকে আছি। সব রকম প্রতিকূল অবস্থায় যুদ্ধ করে একরকম জীবনযাপন করছি এখনো। আমি এখন ভালো আছি, কোনো কমপ্লেন নেই, কারণ আমার মা শক্তভাবে আমার হাত ধরে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমার দুঃখ হয় বাবার রেখে যাওয়া জাতীয় পার্টির জন্য। আমি যদি শারীরিকভাবে সমস্যায় না থাকতাম জাতীয় পার্টি আজ আমি চালাতাম। সেটা সম্ভব নয় দেখেই আমার চাচা জি এম কাদের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঠিক বাবা মারা যাওয়ার আগে রাত ১২টায় জোর করে সাইন নিয়ে জাতীয় পার্টি হাইজ্যাক করে নেন।’
এরিক বলেন, ‘তারপরও দুঃখ হতো না যদি ঠিকমতো পার্টিটা চালাতেন তিনি। কিন্তু আজ সে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হয়ে, যা করছেন সেই কথা কি করে বলবো আমি? তার সব পারসোনাল ছবি মানুষের হাতে হাতে চলে গেছে। তার নিজের কোনো সম্মান, ইজ্জত, ভয়, কিচ্ছু নাই। আমি জানি না উনি কিভাবে নেতাকর্মীর সামনে মুখ দেখান। কিভাবে রাজনীতি করেন।’
তিন বলেন, ‘তারপরে উনি আবার দলের আনিস মামা, হাওলাদার মামা, বাবলা সাহেব, ফিরোজ সাহেব মতো বড় বড় লিডারকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করে দেন। এখন দেখছি তারাও আলাদা আলাদাভাবে গ্রুপিং করছেন। জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে করতে চান তারা। আমি ছোট মানুষ একটা কথা বলবো, মামারা আপনারা জাতীয় পার্টি আর ভাঙবেন না। দেখেন গত ১৭ বছর শেখ হাসিনার আমলে আপনারা মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন। হাজার কোটি টাকা বানিয়েছেন, বিদেশে সম্পত্তির পাহাড় বানিয়েছেন, সব আমার বাবাকে ব্যবহার করে করেছেন। আর কত দরকার আপনাদের?’
তিনি বলেন, ‘দেশকে কিছু দিতে আসেন নাই আপনারা? আপনারা শুধু নিতে চান। আর কত নিবেন, এবার একটু থামুন। থামতে জানতে হয়। বুঝেন না কেন দেশ, জাতি, সমাজ আপনাদের চায় না আর, আপনাদের অনেক বয়স হয়েছে। আপনারা রিটায়ার করেন এবার। আপনারা বাসায় বসে নাতি পুতিদের সাথে খেলা করুন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্টি অফিসে আগুন লাগলো, এরশাদ সাহেব পৈত্রিক বাড়ি স্কাই ভিউতে আগুন লাগলো, আপনারা সবাই ঘরে বসে থাকলেন। কেউ আগুন নেভাতে আসেননি। আপনারা আবার জাতীয় পার্টি করতে চান। বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে কী হয়, দেখেন নাই শেখ হাসিনার অবস্থা? আমার থেকে ছোট ছোট ছাত্ররা জীবন দিয়েছে দেশের জন্য। আমার থেকে ছোট ছোট বাচ্চারাই দেশ চালাবে এখন থেকে, তারাই রাজনীতি করবে। এখন থেকে ইয়াং জেনারেশন, নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টি চালাবে।
আপনারা জাতীয় পার্টির নাম করে পার্টি ভাঙছেন, গ্রুপ করছেন। এতে আবার আমার বাবা পল্লী বন্ধুকে অপমান করা হচ্ছে। একটা বার ভাবুন, এরশাদ সাহেব ৯ বছর শুধু দেশকেই দেন নাই, আপনাদেরও প্রচুর দিয়েছেন। আপনারা তাকে দিয়ে কত বেনিফিটেড হয়েছেন। আপনাদের নাম, ডাক সব হয়েছে। এবার আল্লাহর ওয়াস্তে নোংরা রাজনীতি বাদ দিয়ে এরশাদ সাহেবের আত্মার শান্তির মাগফেরাত কামনা করুন। এটাই আমার অনুরোধ।’