রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫,
২৯ আষাঢ় ১৪৩২
ই-পেপার

রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
শিক্ষা
সংবাদ সংগ্রহকালে ইবি সাংবাদিকদের উপর হামলা
সাকিব আসলাম ,ইবি প্রতিনিধি:
Publish: Sunday, 13 July, 2025, 1:40 PM  (ভিজিট : 15)

কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের একাংশ শিক্ষার্থী কর্তৃক কর্মরত সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসময় সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে  বাঁধা প্রদান'সহ কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পর এবং পেটে লাথি দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

গতকাল শনিবার (১২ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে বিকাল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় হামলাকারীদের শাস্তি দাবি ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক শিক্ষা ক্যাম্পাস প্রতিনিধি আরিফ বিল্লাহ, দৈনিক আজকালের খবর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রবিউল আলম ও দৈনিক বার্তা ২৪ ক্যাম্পাস প্রতিনিধি নূর ই আলম। 

ভুক্তভোগী আরিফ বিল্লাহ জানান,আমি অফিস থেকে রুমে যাচ্ছিলাম তখন ফুটবল মাঠে মারামারির ঘটনা লক্ষ্য করি। দুই পক্ষের হাতাহাতি ও মারামারি চলাকালে সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমি মোবাইল নিয়ে ভিডিও করা আরম্ভ করলে অর্থনীতি বিভাগের ২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা পারভীন তিনা আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়৷ এসময় আমি মোবাইল কেড়ে নেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে একই বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, পান্না ও একই বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, মশিউর রহমান ও হৃদয়সহ আরও ৮/১০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ঘিরে ধরে চর, থাপ্পর, ঘুষি মারতে থাকে।

 তখন দূর থেকে সাংবাদিক নূরে ই আলম ছুটে এসে ভিডিও করলে তারা নূরে ই আলমের উপরও আক্রমণ করে। তৎক্ষনাৎ আমাকে নাজমুল ভাই, সমন্বয়ক সুইট ভাই ও গোলাম রাব্বানী ভাই সহ অনেকে ওদের কাছ থেকে উদ্ধার করলেও পরে ফেরার সময় আবার আমার উপর আরেক দফায় হামলা করে। এসময় আমার সহকর্মী রবিউল আলম ও তামিমকে জোরেসোরে ডাকতে থাকি। সহকর্মী রবিউল এগিয়ে আসলেও তাকে লাথি, ঘুষি, কিল মেরে প্রচন্ড আঘাত করে। মিনিট পাঁচেক ধরে আঘাত সহ্য করতে না পারায় রবিউল মাটিতে পড়ে যায়।


তিনি আরও জানান, ওরা আমার ফোন কেড়ে নিয়েছে কিন্তু এখনো ফেরত দেয় নি। পেশাদারি কাজে বাঁধা প্রদান এবং এক পর্যায়ে মারধরের শিকার হওয়ায় আমি যথাযথ বিচার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি।

ভুক্তভোগী নূর ই আলম বলেন, খেলার মাঠে আমি সমন্বয়ক এস এম সুইট ভাই ও সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী ভাই দাড়িয়ে ছিলাম। অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃবিভাগ খেলায় হটাৎ মারামারি শুরু হলে সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ ভিডিও করতে গেলে তার উপর আক্রমনাত্নক হয়ে কিল ঘুষি মারতে থাকে। ঘটনাস্থলে আমি ছুটে গিয়ে ভিডিও করলে তারা আমার উপর কিল, লাথি ও গলায় ঘুষি সহ খামচে দেয়। এই অবস্থায় সুইট ভাই ও গোলাম রব্বানী ভাই ছুটে এসে উচ্চবাচ্চ করে আমাকে রক্ষা করে। 

এসময় সাংবাদিক রবিউল ছুটে এলে তাকেও বেধড়ক মারতে থাকে। মার সহ্য করতে না পেরে রবিউল এক পর্যায়ে বসে পড়ে। এসময় অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মিনহাজ ও একই ২০২২-২৩ বর্ষের অজিল, সাইফুল, মশিউর রহমান ও হৃদয়সহ ১০/১৫ জন আমাকে কিল, ঘুষি ও ঘাড়ে আঘাত করে। এসময় সমন্বয়ক সুইট ও রব্বানী ভাই হামলা থেকে উদ্ধার করে। সাংবাদিকদের উপর এ অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক হামলাকারীদের বিচার ও প্রশাসনের নিকট নিরাপত্তা চাচ্ছি।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক রবিউল জানান, আমি বিকাল ৫ টার সময় অফিসে অবস্থান করছিলাম। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে অর্থনীতি বিভাগের আন্ত: সেশন ফুটবল  খেলা চলছিলো। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মারামারির ভিডিও করতে গেলে সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহ হামলার শিকার হন। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে গেলে দেখি আরিফ বিল্লাহকে তারা ঘিরে রেখেছে। 

ওই সময় ভিডিও ধারণের প্রস্তুতি নিতে থাকলে কয়েকজন এসে মোবাইল কেড়ে নেওয়ার জন্য উদ্যত হয়। আমি বলেছিলাম ‘আমি সাংবাদিক এভাবে আপনারা চার্জ করতে পারেন না।’ তখন কয়েকজন ‘তার মোবাইল কেড়ে নে, ওরে ধর, ভিডিও থাকলে ডিলিট দে’ বলে চারদিক থেকে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারে। বিশেষ করে অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ ইসলাম  আমার তলপেটে লাথি মারে। তখন আমি মাটিতে পড়ে যাই। এসময় সমন্বয়ক সুইট,  রব্বানী ভাইসহ কয়েকজন আমাকে উদ্ধার করে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ২০ এপ্রিল একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন নাহিদ। পেশাদারি কাজে বাঁধা প্রদান এবং মারধরের ঘটনায় আমি যথাযথ বিচার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছি।


ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এস এম সুইট, রোভার খন্দকার সায়েম এবং ডিবিসি প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, তাদের সামনেই আরিফ বিল্লাহ সহ রবিউলকে মারধর করা হয়। পরে সবাই মিলে আহতদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, খেলার মধ্যে হঠাৎ মারামারি শুরু হলে সেখানে আরিফ ভিডিও করতে গেলে আরিফের ওপর ওরা চড়াও হয়। এরপর একই ভাবে ওরা রবিউল এবং আরেকজন সাংবাদিককে মারধর করে৷ ঘটনাস্থলে আমি তাদের আটকানোর চেষ্টা করি। তবে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের সাথে এমন আচরণ অবশ্যই কাম্য নয়।

প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, আমি বাইরে হট্টগোলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে যাই, তখন দেখি কয়েকজন মিলে একজন সাংবাদিককে মারতেছে। অপরদিকে আরেক সাংবাদিক আমার পিছন থেকে ওইদিকে যাচ্ছিল। তারপর সে ভিডিও করা শুরু করলে তার ভিডিও বন্ধ করতে একদল এসে বলে এবং তাকে মারতে উদ্ধত হয়। এবং একজন এসে তার পেটে লাথি মারে। কয়েকজন কিল-ঘুষি মারে।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের একজন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিভাগের আন্তঃসেশন খেলা হচ্ছিল। তখন বল আউট হওয়া না হওয়া নিয়ে  নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়। জুনিয়র একজন স্যরি বলে সমাধান করা হয়। এসময় আমি সাংবাদিক কাউকে মারিনি। আমার গলা ধরছে তখন আমি কি করব।’ এ কথা বলেই তিনি প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।

অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ড. পার্থ সারথি লস্কর বলেন, আজকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃশিক্ষাবর্ষ খেলা ছিল। সেখানে ২০১৯-২০, ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের খেলা ছিল। শুনেছি মারামারি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে ঠিক কি হয়েছে জানি না। বিষয়টি নিয়ে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

আ. দৈ./কাশেম

আপনার মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হাইকোর্টের আদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের মামলা স্থগিত, আপিলের সিদ্ধান্ত দুদকের
দেশে আরেকটি তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠবে: নাহিদ ইসলাম
মিয়ানমারে উলফার ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ড্রোন হামলার অভিযোগ
৩০ জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদে উপনীত হতে হবে : আলী রীয়াজ
গোলাম রাব্বানীর ভাইসহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
আরো খবর ⇒

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা বেড়েছে ১৫ ব্যাংকের
পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যা: ৫ আসামি গ্রেপ্তার
হাসিনার অডিও এসেছে, ভিজুয়ালও আসবে: তথ্য উপদেষ্টা
‘৫ কোটি টাকা’ চাঁদা না পেয়ে পল্লবীতে আবাসন কর্মকর্তাকে গুলি
হাত-পা নেই, মুখ দিয়ে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেন লিতুন জিরা
শিক্ষা- এর আরো খবর
close
সম্পাদক ও প্রকাশক : কামরুজ্জামান সাঈদী সোহাগ
নির্বাহী সম্পাদক : তৌহিদুর রহমান

প্রকাশক কর্তৃক ১১/১/বি উত্তর কমলাপুর, মতিঝিল থেকে প্রকাশিত
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : সাগুফতা ডি লরেল (তৃতীয় তলা), কমলাপুর বাজার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০

মফস্বল সম্পাদক : ০১৭৭৫৮১৮২৭৫, ফোন : ০১৭১২-৫০১২৩৬, ০২-৫৮৩১৬১০৯ , ই-মেইল : ajkerdainik$gmail.com
About Us    Advertisement    Terms & Conditions    Privacy Policy    Copyright Policy    Circulation    Contact Us   
© ২০২৪ আজকের দৈনিক
🔝