টানা ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দায়িত্ব পালনকারী তিনটি নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সব সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং পরবর্তীতে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় তা এখন জনমনে গভীর আগ্রহ ও আলোচনা সৃষ্টি করেছে। জনতার আন্দোলন ও অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
গতকাল ২৩ জুন থেকে এই পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়টি কার্যকর হয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরের অধীন ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহম্মদ নুরস ছালাম জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক তিনটি কমিশনের সিইসি এবং সদস্যদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, দায়িত্বকালীন সময়ে তারা কূটনৈতিক মর্যাদার ‘লাল পাসপোর্ট’ ব্যবহার করতেন। অবসরের পর সাধারণ ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করেন তারা, যা এবার স্থগিত করা হয়েছে।
যাদের পাসপোর্ট বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে আছেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনজনই আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দায়িত্ব পালনকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। কে এম নুরুল হুদাকে সম্প্রতি উত্তরা থেকে আটক করে পুলিশ। তার আগেই ক্ষুব্ধ জনতা তাকে গণহেনস্তার পর পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে আদালতে তোলা হলে পুলিশ তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে, তবে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রথম কমিশন (২০১২–২০১৭) ছিল কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে, যাদের অধীনে ২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচন ‘বিনা ভোটের নির্বাচন’ নামে কুখ্যাত। দ্বিতীয় কমিশন (২০১৭–২০২২) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে, যা ‘রাতের ভোট’ হিসেবে সমালোচিত হয়। তৃতীয় ও সর্বশেষ কমিশন (২০২২–২০২৪), যার প্রধান ছিলেন কাজী হাবিবুল আউয়াল, জানুয়ারি ২০২৪-এর নির্বাচন পরিচালনা করে, যা ‘ডামি ভোটের নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিত। এই তিনটি কমিশনের সদস্যদের বিরুদ্ধে জনগণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের, যা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এখন প্রশাসনিক পদক্ষেপে রূপ নিচ্ছে।
এই পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও জবাবদিহিতা প্রশ্নে দেশব্যাপী জনচেতনার প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিনের অনিয়মের অভিযোগ, বিতর্কিত নির্বাচন ও রাজনৈতিক স্বার্থে কমিশনের ব্যবহার—সবকিছু মিলে এই সিদ্ধান্ত জনগণের বিচারের এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
আ. দৈ./কাশেম